ক্রাউডসোর্সিং শব্দটি নিয়ে ইদানিং অনেক আলোচনা হলেও এসম্পর্কে অনেকে নিশ্চিত নন বিষয়টি আসলে কি ? সাধারনভাবে মনে করা হয় এর পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট কাজ একে অন্যের কাছে করিয়ে নেন। বাস্তবে এই ব্যবস্থার পরিবর্তণ হচ্ছে। আগামীতে আরো হবে।
এই পোষ্টে ক্রাউডসোর্সিং এর পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ক্রাউডসোর্সিং কি
কিছু নিয়ম, কিছু পদ্ধতি এবং যোগাযোগের একটি মাধ্যম এই কথাগুলি ব্যবহার করতে পারেন ক্রাউডসোর্সিং সম্পর্কে। মুলত ক্রাউডসোর্সিং এক ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন ইন্টারনেট। এর পেছনে কাজ করে কিছু প্রতিস্ঠান। এদেরকে ক্রাউডসোর্সিং কোম্পানী বলতে পারেন। ক্রাউড হচ্ছে কোম্পানী এবং কর্মী। এই দুইকে এক করার কাজ করে ক্রাউডসোর্সিং কোম্পানী।
ব্যবহারিক দৃষ্টিতে দেখা যাক। কর্মী হিসেবে আপনি চাকরী বা কাজের জন্য খোজ করবেন কোন কোম্পানী। আপনি ক্রাউডসোর্সিং কোম্পানীর মাধ্যমে পুরো বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন আপনার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, আপনি কোন ধরনের কাজ করতে চান এসব তথ্য। বিশ্বের যে কোন যায়গার যে কোন কোম্পানীর যদি প্রয়োজন হয় আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন।
অথবা ব্যবসা বা কোম্পানীর পক্ষ থেকে আপনার প্রয়োজন কর্মী। আপনি তাদের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন আপনার কি কাজ প্রয়োজন, সেজন্য কত ব্যয় করতে আগ্রহী। সারা বিশ্বের কর্মীদের কাছে পৌছে গেল সেই তথ্য। কোন কর্মী সেই কাজ করতে আগ্রহি হলে আপনার সাথে যোগাযোগ করবেন।
কর্মী এবং কোম্পানী এই দুইয়ের মধ্যে যোগাযোগ হচ্ছে নির্দিষ্ট কাজের ভিত্তিতে। সাধারন চাকরী থেকে বিষয়টি পৃথক। চাকরী করলে আপনি মাসে নির্দিষ্ট বেতন পাবেন, কাজ কতটা করলেন কিংবা করলেন না তাতে কিছু যায় আসেনা। ক্রাউডসোর্সিং কাজের ক্ষেত্রে আপনার নিয়োগ বা চুক্তি কাজ ভিত্তিক। আগেই ঠিক করা হবে কাজ কি, পারিশ্রমিক কত, সময় কত ইত্যাদি। দুপক্ষ সন্তুস্ট থাকলে সম্মতির ভিত্তিতে কাজ হবে।
ক্রাউডসোর্সিং এর মাধ্যমে কি করা যায়
ক্রাউডসোর্সিং ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করে যোগাযোগ করে। কাজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেন করা যায় এমন যে কোন কাজই ক্রাউডসোর্সিং এর মাধ্যমে করা হয়। কোন লেখালেখি, সফটঅয়্যার তৈরী, ভয়েস বা ভিডিও রেকর্ড করা, ডকুমেন্টারী বা মুভি তৈরী, গ্রাফিক ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি এধরনের কাজগুলি বেশি পরিচিত। এর বাইরে নানা ধরনের আউটসোর্সিং কোম্পানী গড়ে উঠছে। এখানে কয়েকটির উদাহরন দেয়া হচ্ছে;
বৃটেন ভিত্তিক ব্লার গ্রুপ ডিজাইনার, রাইটার, মার্কেটার, ফটোগ্রাফার, আর্টিষ্ট সকলকে নিয়ে কাজ করে। বিশেষ কাজের জন্য দক্ষতা প্রয়োজন হলে সেটা বাড়ানোর ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন ধরানের কাজের মধ্যে থেকে বাছাই করে নির্দিষ্ট ধরনের কাজ বা কর্মী খুজতে সাহায্য করে।
জিনিয়াস-রকেট ইন্টারনেট এবং টিভির জন্য ভিডিও তৈরী থেকে শুরু করে এনিমেশন এবং মোশন গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করে। তারা তৈরী কাজগুলিকে নিজের কাছে রাখে এবং সেখান থেকে নির্মাতাদের অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেয়।
ফ্রিল্যান্সার এর নাম তুলনামুলক বেশি পরিচিত। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব পেজ ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, রাইটিং, ডাটা এন্ট্রি এসব কাজের জন্য ক্রাউডসোর্সিং এর ব্যবস্থা করা ছাড়াও তাদের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা আছে। আপনি একটি ডিজাইন কিংবা ওয়েব টেম্পলেট বিক্রির জন্য তাদের সাইটে রাখতে পারেন। বিক্রি হলে আপনি টাকা পাবেন।
ক্রাউডসোর্সিং বিষয়টি তুলনামুলক নতুন এবং এর পেছনের কোম্পানীগুলি প্রতিনিয়ত এতে পরিবর্তন আনছে। নতুন নতুন ধারনা কাজে লাগাচ্ছে, নতুন সেবা যোগ করা হচ্ছে। কোম্পানীগুলিও তাদের কর্মীর জন্য সরাসরি নিয়োগ দেয়ার বদলে নির্ভর করছেন এদের ওপর। একদিকে এরফলে নিজেদের প্রয়োজনমত সত্যিকারের দক্ষ কর্মী পাওয়া সম্ভব হচ্ছে অন্যদিকে যারা কর্মী তারা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন সারা বিশ্বে।
একসময় ক্রাউডসোর্সিং নির্দিষ্ট কাজ নির্ভর ছিল। সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বিষয়টি পরিনত হচ্ছে অনলাইন চাকরীতে।
মাইক্রোসফটের নাম রাখার বিষয়ে একবার বিল গেটস বলেছিলেন, প্রথমে শুরু করার সুবিধে হচ্ছে ইচ্ছেমত নাম বাগানো যায়। ক্রাউডসোর্সিং বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। ভবিষ্যত কাজের পদ্ধতি নিশ্চিতভাবেই আরো বেশি ক্রাউডসোর্সিং নির্ভর হবে। আপনিও প্রথমে শুরু করার সুবিধে নিতে পারেন এখনই।