কখন ট্রেড করবেন – ফরেক্স মার্কেট সেশন – Forex Market

একদিন আমার এক ফ্রেন্ড রাতুল আমাকে প্রশ্ন করলো মাঝে মাঝে দেখি মার্কেটে প্রাইস অনেক বাড়ে-কমে। আবার অনেক সময় দেখি কোনো মুভমেন্টই হয়না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কম্পিউটারের সামনে এত সময় বসে থাকতে বোরিং লাগে। যদি জানতাম কখন কখন বড় মুভমেন্ট হবে, তাহলে শুধু তখনই ট্রেড করতাম, আর বাকি সময় অন্য কাজ করা যেত কিংবা মুভি দেখা যেত।

ফরেক্স(Forex) কি?

আমি বললাম ফরেক্স মার্কেট সপ্তাহে ৫ দিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। মার্কেট সবসময় ওপেন থাকে তার মানে এই নয় যে আমাদের সবসময় ট্রেড করা উচিত। কারন মার্কেট সবসময় সক্রিয় থাকে না। অনেক সময় দেখা যায় মার্কেটে কোন নড়াচড়া নেই অর্থাৎ ভোলাটিলিটি নেই। আমরা ফরেক্সে প্রফিট করতে পারি যখন প্রাইস বাড়ে কিংবা কমে। কিন্তু যদি মার্কেটে তেমন একটা মুভমেন্টই না হয়, তাহলে প্রফিট হবে কিভাবে?সে বলল, তাহলে আমরা ট্রেড করবো টা কখন? এরকম হবার কারন টা কি?আমি তাকে বললাম যে, ফরেক্স মার্কেটে ২৪ ঘণ্টাকে আমরা প্রধানত ৪টা ভাগে ভাগ করতে পারি। এগুলো হল সিডনী সেশন, টকিয়ো সেশন, লন্ডন সেশন এবং নিউইয়র্ক সেশন। আমার কাছে নিউইয়র্ক সেশনটাই সবচেয়ে প্রিয়।রাতুল এর উত্তরে আমাকে বলল, এগুলো তো শহরের নাম। আগে অনেককে এসবের নাম বলতে শুনেছি। অনেকেই বলে একটু পরেই নিউইয়র্ক সেশন শুরু হয়ে যাবে। আমি তো এসবের কিছুই বুঝি না।আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম এই চারটা সেশন যখন শুরু হয়, তখন মার্কেটে অনেক ভোলাটিলিটি শুরু হয়। এর কারন হল একটি সেশন ওপেন হলেই সেই অঞ্চলে অনেক ব্যবসা-বানিজ্য, লেন-দেন ইত্যাদি শুরু হয়। অর্থনীতি সম্পর্কে বড় বড় নিউজ-সিদ্ধান্ত ঐ সময়েই নেয়া হয় অধিকাংশ সময়ে। তাই নতুন সেশন শুরু হলেই মার্কেটে বড়-সড় মুভমেন্ট/নড়াচড়া শুরু হয়ে যায়। নিচের চার্টটি ওকে দেখিয়ে বললাম যে কোন সেশন কখন শুরু এবং শেষ হয়।

রাতুল এবার বলল, গ্রীষ্মকাল (summer) আর শীতকালে (winter) ভিন্ন সময়ে সেশন ওপেন হয় কেন? আমি তাকে বললাম DST (Day-Light Saving Time) এর কথা মনে আছে যেটা বাংলাদেশে কয়েক বছর আগে চালু হয়েছিল? ত্রিভুজ বলল, হ্যা। তখন তো আমাদের সময় আমরা ১ ঘণ্টা এগিয়ে দিয়েছিলাম। এবার আমি বললাম, পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোও তাদের কাজের সময় বৃদ্ধির জন্য গ্রীষ্মকাল এবং শীতকালে ১ ঘণ্টা সময় পরিবর্তন করে। আর সে কারনেই আমাদের এখানেও বাংলাদেশ সময় অনুসারে সেশনগুলো ওপেন-ক্লোজের সময় পরিবর্তন হয়। এখানে BST দিয়ে Bangladesh Standard Time বোঝানো হয়েছে।এবার সে আমাকে বলল, যেকোনো সেশন ওপেন হলে যেহুতু মার্কেটে ভোলাটিলিটি বেড়ে যায়, ২টা সেশন একসাথে ওপেন থাকলে নিশ্চয়ই ভোলাটিলিটি আরও বেশি থাকে, মানে মুভমেন্ট আরও বেশি হয়?এবার আমি বুঝলাম যে  বন্ধু  আমার ব্যাপারটা আস্তে আস্তে  বুঝতে পারছে। আমি তাকে বললাম হ্যা, ব্যাপারটা ঠিক এইরকম। গ্রীষ্মকালে দুপুর ১:০০ থেকে দুপুর ৩:০০ পর্যন্ত টকিয়ো ও লন্ডন সেশন ওভারল্যাপ করে এবং সন্ধ্যা ৬:০০ থেকে রাত ১০:০০ পর্যন্ত লন্ডন ও নিউইয়র্ক সেশন ওভারল্যাপ করে। তাই এই সময়ে মুভমেন্টও থাকে বেশি। ট্রেড করার জন্য মোটামুটি আদর্শ সময়।

এবার আমি রাতুলকে এই চার্টটি দেখিয়ে বললাম যে কোন সেশনে কোন পেয়ারের এভারেজ মুভমেন্ট কত পিপস। দেখা যায় লন্ডন সেশনেই সবচেয়ে বেশি মুভমেন্ট দেখা যায়। আর যেহুতু নিউইয়র্ক সেশন লন্ডন সেশনের সাথে ৪ ঘণ্টা ওভারল্যাপ করে, সেহুতু লন্ডন এবং নিউইয়র্ক এই ২টি সেশন ট্রেড করার জন্য আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়।এবার রাতুল আমাকে বলল ফরেক্স সেশনগুলো সম্পর্কে তাকে একটু বিস্তারিত ধারনা দিতে। ভাবলাম টকিয়ো সেশন দিয়েই তাহলে শুরু করা যাক।টকিয়ো সেশনবাংলাদেশ সময় ভোর ৬:০০ টায় টকিয়ো সেশন শুরু হয় এবং দুপুর ৩:০০ টায় টকিয়ো সেশন শেষ হয়। টকিয়ো সেশন এশিয়ান সেশন নামেও পরিচিত, কারন টকিয়ো হল এশিয়ার অর্থনৈতিক রাজধানী। আর জাপান হল পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম ফরেক্স ট্রেডিং সেন্টার। জাপানিজ ইয়েন হল পৃথিবীর ৩য় সর্বাধিক ট্রেডকৃত কারেন্সি। সব ফরেক্স লেনদেনের ১৬.৫০% লেনদেন হয় ইয়েনের। এবং সকল ফরেক্স লেনদেনের ২১% হয় এই টকিয়ো সেশনে।টকিয়ো সেশনের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আমি ওকে বলেছিলাম। সেগুলো হলঃ

  • এই সেশনের যে শুধু জাপানের অবদান থাকে তাই নয়, হংকং, সিঙ্গাপুর, সিডনী ইত্যাদি অঞ্ছলেও অনেক অর্থনৈতিক লেনদেন হয় যা এই সেশনে প্রভাব ফেলে।
  • জাপান মূলত রপ্তানি নির্ভর দেশ। চায়নারও এখানে ভালো অবদান রয়েছে। কেন্দ্রিয় ব্যাংক এবং এক্সপোর্টাররা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
  • মাঝে মাঝে মার্কেটে ভোলাটিলিটি এতও কমে যায় যে ট্রেডারদেরকে ট্রেড করার জন্য মাছ ধরার বরশি নিয়ে অপেক্ষা করার মত বসে থাকতে হয়।
  • মূলত এশিয়ান পেয়ারগুলোতে অন্য পেয়ারগুলোর তুলনায় বেশি মুভমেন্ট দেখা যায়। যেমন eur/usd, gbp/usd এর তুলনায় aud/usd, nzd/usd তে মুভমেন্ট বেশি হয়।
  • এই কম ভোলাটিলিটির সময় বেশিরভাগ পেয়ার একটি রেঞ্জের মধ্যে ঘোরাফেরা করে, যা কিনা দিনের পরবর্তী সময়ে ব্রেকআউট ট্রেডের সুযোগ সৃষ্টি করে।
  • এই সেশনের শুরুতেই সাধারনত মুভমেন্ট বেশি হয়, কারন তখনই অর্থনৈতিক নিউজগুলো বেশি পাবলিশ হয়।
  • টকিয়ো সেশনের মুভমেন্ট দেখেই ট্রেডাররা সাধারনত পরবর্তী সেশনে ট্রেড করার স্ট্রাটেজি ঠিক করে।

টকিয়ো সেশনে যেসব পেয়ার ট্রেড করা উচিতঃএবার রাতুল বলল, অনেক কিছু জানা গেল। কিন্তু টকিয়ো সেশনে কোন কোন পেয়ার গুলো ট্রেড করার জন্য ভালো হবে? এই সেশনে তো অন্যান্য পেয়ারগুলো থেকে এশিয়ান পেয়ারগুলোতে মুভমেন্ট বেশি হয়। তাহলে আমাদের সেইসব পেয়ার ট্রেড করা উচিত?টকিয়ো সেশনে অস্ট্রেলিয়া, নিউজল্যান্ড, জাপানের গুরুত্বপূর্ণ নিউজ পাবলিশ হয়। এরফলে নিউজ ট্রেড করার একটু ভালো সুযোগ পাওয়া যায়। JPY পেয়ারগুলোতে ভালো মুভমেন্ট দেখা যায়। চায়না কিন্তু আরেকটি অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার। তাই যখনই চায়না থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিউজ প্রকাশিত হয়, তা ফরেক্স মার্কেটে ভালো ভোলাটিলিটি সৃষ্টি করে। টকিয়ো সেশনে JPY এবং AUD পেয়ারে ভালো মুভমেন্ট দেখা যায়। তাই এই পেয়ারগুলো ট্রেড করার জন্য উত্তম।লন্ডন সেশনযখন এশিয়ান মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়, তার কিছুক্ষন পরই লন্ডন সেশন শুরু হয়। লন্ডন সেশন ইউরোপিয়ান সেশন নামেও পরিচিত। ইউরোপে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক মার্কেট রয়েছে, যদিও ট্রেডারদের চোখ বেশিরভাগ সময় থাকে লন্ডনের দিকে। গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১:০০ (শীতকালে দুপুর ২:০০) – টায় লন্ডন সেশন শুরু হয় এবং গ্রীষ্মকালে রাত ১০:০০ (শীতকালে রাত ১১:০০) – টায় লন্ডন সেশন শেষ হয়।ঐতিহাসিকভাবেই লন্ডন ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতি মিনিটেই হাজার হাজার ব্যবসায়ী এখানে লেনদেন করে। সর্বমোট লেনদেনের ৩০% হয়য় শুধুমাত্র এই লন্ডন সেশনেই।টকিয়ো সেশনের মত লন্ডন সেশনেরও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলো হলঃ

  • লন্ডন সেশন ২টি গুরুত্বপূর্ণ সেশনের সাথে (টকিয়ো এবং নিউইয়র্ক) ওভারল্যাপ করে। অসংখ্য ফরেক্স লেনদেন এই সেশনে ঘটে। তাই দেখা যায় এই সময়ে মার্কেটে লিকুইডিটিও থাকে বেশি এবং পেয়ারগুলোতে স্প্রেডও থাকে তুলনামুলক ভাবে কম।
  • অসংখ্য লেনদেন এবং ট্রেড হবার কারনে লন্ডন সেশন হল সবচেয়ে বেশি ভোলাটাইল সেশন
  • দেখা যায় অধিকাংশ ট্রেন্ড লন্ডন সেশনে শুরু হয়য় এবং নিউইয়র্ক সেশনের শুরু পর্যন্ত চলতে থাকে।
  • এই সেশনের মাঝামাঝি সময়ে ভোলাটিলিটি কিছুটা কমে যায়, কারন ট্রেডাররা নিউইয়র্ক সেশন শুরুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
  • অনেকসময় দেখা যায় লন্ডন সেশনের শেষের দিকে ট্রেন্ড রিভার্স হয়ে যায়। কারন ইউরোপিয়ান ট্রেডাররা দিনশেষের আগে তাদের ট্রেড প্রফিতে ক্লোজ করে দিতে চায়।

লন্ডন সেশনে যেসব পেয়ার ট্রেড করা উচিতঃএবার রাতুল আমাকে প্রশ্ন করলো, নিশ্চয়ই লন্ডন সেশনে ইউরো আর পাউন্ডের পেয়ার গুলো ট্রেড করার জন্য ভাল? আমি তাকে উত্তর দিলাম যেহুতু লন্ডন সেশনে অনেক বেশি ট্রেড হয়য়, তাই দেখা যায় এই সেশনে অনেক বেশি লিকুইডিটি থাকার কারনে প্রায় সব পেয়ারেই ট্রেড করা যায়। অবশ্যই মেজর পেয়ারগুলো ট্রেড করা জন্য ভালো যেমন – EUR/USD, GBP/USD, USD/JPY, USD/CHF, কারনে সেগুলোতে স্প্রেড কম থাকে। এবং এই পেয়ারগুলো দেখা ইউরোপিয়ান সেশনে যে নিউজগুলো আসে সেগুলো দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হয়। এছাড়া ইয়েন ক্রস পেয়ারগুলোও ট্রেড করা যায় বিশেষ করে EUR/JPY এবং GBP/JPY, কারন এই পেয়ারগুলো তখন কিছুটা ভোলাটাইল থাকে।নিউইয়র্ক সেশনলন্ডন সেশন চলতে চলতে যখন মার্কেটের ভোলাটিলিটি কিছুটা স্থির হয়ে আসে, তখন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬:০০ (শীতকালে সন্ধ্যা ৭:০০) – টায় নিউইয়র্ক সেশন শুরু হয় এবং গ্রীষ্মকালে রাত ৩:০০ (শীতকালে রাত ৪:০০) – টায় নিউইয়র্ক সেশন শেষ হয়। এশিয়া এবং ইউরোপের মত, আমেরিকাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরেক্স মার্কেট। সব ট্রেডারদের দৃষ্টি থাকে নিউইয়র্ক সেশনের দিকে। নিউইয়র্ক সেশন আমেরিকান সেশন নামেও পরিচিত।নিউইয়র্ক সেশনের বৈশিষ্ট্যগুলো হলঃ

  • যেহুতু এই সেশনটি লন্ডন সেশনের সাথে ওভারল্যাপ করে, তাই এই সেশনের শুরুতে মার্কেটে লিকুইডিটি বেশি থাকে।
  • অধিকাংশ অর্থনৈতিক রিপোর্ট এবং নিউজ এই সময়ে প্রকাশ হয়। প্রায় ৮৫% ট্রেডগুলোই ডলার এর সাথে কোনো না কোন ভাবে সম্পর্কিত। তাই যখন কোন আমেরিকান ইকনোমিক ডাটা রিলিজ হয়, তা মার্কেটকে মুভ করাতে যথেষ্ট ভুমিকা পালন করতে সক্ষম।
  • লন্ডন সেশন শেষ হয়ে যাওয়ার পর, নিউইয়র্ক সেশনের শেষের দিকে মার্কেটে ভলাটিলিটি এবং লিকুইডিটি অনেক কমে যায়। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত মুভমেন্ট প্রায় থাকেনা বললেই চলে।
  • শুক্রবার বাংলাদেশ সময় রাতের দিকে মার্কেট প্রায় শান্ত হয়ে যায়। কারন পরেরদিন মার্কেট অফ থাকার কারনে জন্য মার্কেটে ভোলাটিলিটি অনেক কম থাকে।
  • শুক্রবারে নিউইয়র্ক সেশনের মাঝামাঝি সময়ে অনেক সময় প্রাইস রিভারস করতে দেখা যায়। কারন অনেক ট্রেডাররা মার্কেট হলিডের সময় কোন নিউজের প্রভাব উপেক্ষা করার জন্য সপ্তাহ শেষ হবার আগেই ট্রেড ক্লোজ করে দেয়।

নিউইয়র্ক সেশনে যেসব পেয়ার ট্রেড করা উচিতঃরাতুল আমাকে বলল, যেহুতু এই সেশনে মার্কেটে ভোলাটিলিটি অনেক বেশি থাকে, তাই নিশ্চয়ই প্রায় সব পেয়ারই ট্রেড করা যায়? আমি বুঝতে পারলাম ত্রিভুজ ফরেক্স মার্কেটের ট্রেডিং সেশনগুলো সম্পর্কে ভালো ধারনা অর্জন করে ফেলেছে। আমি তাকে বললাম ঠিক তাই। এই সেশনে প্রায় সব পেয়ারই ট্রেড করা যায়, কারন ভালো মুভমেন্ট থাকে। আর এই সেশনে ডলারের বিভিন্ন ফান্ডামেন্টাল ডাটা রিলিজ হওয়ার কারনে দেখা যায় সবাই নিউজগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকে, কারন সবাই ডলার ভালবাসে। আর এই নিউজগুলো খারাপ আসুক কিংবা প্রত্যাশিত আসুক, ডলারের লাফালাফির কারনে তা মার্কেটকে নাটকীয়ভাবে প্রচণ্ড নাড়া দিতে পারে।সেশনের ওপর সেশন – সেশন ওভারল্যাপঃরাতুল আমাকে প্রশ্ন করলো দিনের মধ্যে ট্রেড করার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় কোনটি? এবার আমি রাতুলকে জিজ্ঞেস করলাম, বলতো টেলিভিশনে সবচেয়ে ভালো প্রোগ্রামগুলো কখন দেখায়? রাতুল উত্তর দিল- “ফ্যামিলি টাইম”. আমি বললাম ঠিক তাই। কিন্তু কারণটা কি? ও আমাকে উত্তর দিল কারন সেই সময়ে পরিবারের সবাই মিলে একসাথে টেলিভিশন দেখে, তাই ভালো প্রোগ্রামগুলো প্রচার করা হয়। আমি তাকে বললাম ঠিক তাই। ফরেক্স মার্কেটের ক্ষেত্রেও একই রকম। মার্কেটে যখন ২টি সেশন ওভারল্যাপ করে, তখন মার্কেটে মুভমেন্টও বেশি হয়, তাই ট্রেড করার সুযোগও থাকে বেশি।ফরেক্স মার্কেটে ২টি প্রধান সেশন ওভার ল্যাপ হলঃ

  • টকিয়ো-লন্ডন সেশন ওভারল্যাপ
  • লন্ডন-নিউইয়র্ক সেশন ওভারল্যাপ

টকিয়ো-লন্ডন সেশন ওভারল্যাপঃটকিয়ো সেশনে মুভমেন্ট অন্য সেশনগুলোর তুলনায় খুব একটা বেশি হয়না। আর টকিয়ো-লন্ডন সেশন যখন ওভারল্যাপ করে, তখন টকিয়ো সময় অনেকটা বিকেল তাই মুভমেন্ট কমই থাকে। ট্রেড করার জন্য এই সময়টা কিছুটা বোরিং লাগতে পারে। অনেক নতুন ট্রেন্ড তৈরি হয় এই সময়ে, কিন্তু অনেক ট্রেডাররাই ট্রেন্ড কনফারমেশনের জন্য লন্ডন-নিউইয়র্ক সেশনের জন্য অপেক্ষা করে।লন্ডন-নিউইয়র্ক সেশন ওভারল্যাপঃএই সেশন ওভারল্যাপ হল ট্রেড করার সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময় ট্রেডাররা সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে মার্কেটের দিকে মনোনিবেশ করে। এই সেশন ওভারল্যাপ হল দিনের সবচেয়ে ব্যাস্ত সময়, কারন ২টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ট্রেডিং সেন্টার লন্ডন এবং নিউইয়র্ক এই সময় ওপেন থাকে।এই সময় মার্কেটে অনেক বড় বড় মুভমেন্ট দেখা যায় বিশেষ করে যখন আমেরিকা এবং কানাডা থেকে নিউজ-রিপোর্টগুলো প্রকাশিত হয়। ইউরোপ থেকে দেরিতে প্রকাশ হওয়া নিউজগুলোও ভালো প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। যদি লন্ডন সেশনে কোন ট্রেন্ড তৈরি হয়, তবে বেশিরভাগ সময় নিউইয়র্ক সেশন ওভারল্যাপের সময় তা কন্টিনিউ করতে দেখি। কারন আমেরিকান ট্রেডাররা সেদিন আগে কি হয়েছিল তা জেনে ট্রেড করতে ঝাপিয়ে পড়ে এবং অধিকাংশ সময় পূর্বের ট্রেন্ড অনুসরন করে। এই সেশন ওভারল্যাপ শেষ হবার পর পরই দেখা যায় মার্কেটে মুভমেন্ট অনেক কমে যায়, কারন অনেক ইউরোপিয়ান ট্রেডাররা দিনশেষে তাদের ট্রেড ক্লোজ করে দেয়।ট্রেড করার জন্য সপ্তাহের সেরা দিনগুলোঃরাতুল আমাকে বলল, সবশেষে যা বোঝা গেল, তা হল লন্ডন সেশনই হল ফরেক্স মার্কেটের সবচেয়ে ব্যাস্ততম সেশন। আর তারসাথে যদি নিউইয়র্ক সেশন ওভারল্যাপ করে, তবে তো কথাই নেই। কিন্তু ট্রেড করার জন্য কি বিশেষ কোন ভালো দিন রয়েছে? আমি তাকে বললাম হ্যাঁ। কিছু বিশেষ দিন রয়েছে যে দিনগুলোতে মার্কেট অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশীই মুভ করে।সপ্তাহের কোন দিনগুলোতে গড়ে কোন পিপস মুভমেন্ট হয় সেটা আমি ত্রিভুজকে এই চার্টের মাধ্যমে দেখাইঃ

ওপরের চার্ট থেকে দেখা যায় যে, সপ্তাহের মাঝের দিনগুলোতেই মুভমেন্ট বেশী হয়। সপ্তাহের এই দিনগুলোতেই সবচেয়ে বেশী পিপস মুভমেন্ট দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যায় সোমবার অনেক জায়গায় ব্যাংক হলিডে থাকে, নিউজ কম রিলিজ হয় কিংবা ট্রেডাররা নতুন সপ্তাহে কোনদিকে ট্রেন্ড মোড় নিবে তা ঠিক করতে না পেরে ট্রেড কম করে। ওপরদিকে শুক্রবার অনেকেই বিকেলের পর ট্রেড করে না পরেরদিন মার্কেট হলিডে থাকায়। সেই অর্থে শুক্রবার মার্কেট বলা যায় অর্ধেক সময় অ্যাকটিভ থাকে।সময়কে সঠিকভাবে ম্যানেজ করাঃআমি এবার রাতুলকে বললাম নিশ্চয়ই এবার ফরেক্স সেশনগুলো সম্পর্কে ধারনা পরিস্কার হয়েছে? রাতুল উত্তর দিল, হ্যাঁ। এখন থেকে আমি সব ফরেক্স সেশন এবং সেশন ওভারল্যাপের দিকে নজর রাখব। আমি তাকে বললাম আমরা তো ভ্যাম্পায়ার নই যে সব সেশনগুলোতেই ট্রেড করতে পারবো। আর যদি পারি, কেনই বা করবো? ফরেক্স মার্কেট ২৪ ঘন্টা ওপেন থাকে তার মানে এই নয় যে ২৪ ঘণ্টাই ভালো মুভমেন্ট থাকে। আর যদি থাকেই, কেনই বা আমরা সবসময় ট্রেড করবো? আমাদের শুধু ভালো ট্রেডের সুযোগ পেলেই ট্রেড করা উচিত।আমাদের সুস্থভাবে জীবন-যাপনের জন্য বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন। সবসময় ট্রেড করার জন্য কম্পিউটারের সামনে না বসে মাঝে মাঝে সবাই মিলে বাইরে ঘুরতে এবং খেতে যাওয়া উচিত।এতে সবদিক দিয়েই ভাল ।

XM দিচ্ছে Suzuki Gixxes SF সহ $4000 এর পুরস্কার

mdjobayer68

Share
Published by
mdjobayer68

Recent Posts

WhatsApp এ আসতে চলেছে চ্যাট জিপিটি এর মত চ্যাট বট!!

বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে সব কিছুর মধ্যেই পরিবর্তন আসছে এবং বর্তমানে সময় বিভিন্ন অ্যাপ এর প্রতি… Read More

9 months ago

সহজ এফিলিয়েটস থেকে মাসে আয় করুন ২,৩৫,০০০ টাকা

সহজ এফিলিয়েট হচ্ছে বাংলাদেশের ১ নাম্বার এফিলিয়েট প্লাটফর্ম। এখানে কাজ শুরু করতে কোন টাকা পয়সা… Read More

2 years ago

৫ টি গ্যাজেট যা অবাক করে দিয়েছে পুরো পৃথিবীকে

হ্যালো বন্ধুরা সায়েন্স এবং টেকনোলজির সম্পূর্ণ নতুন দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম। আমি সুমন আছি আপনাদের সাথে,… Read More

3 years ago

প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা ইনকামের রিয়াল একটি সাইট।

আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন আজকে আপনাদের মাঝে আমি এমন একটি ইনকাম অ্যাপস… Read More

3 years ago

আপনার এ্যান্টিভাইরাস কাজ করে কি না চেক করুন খুব সহজেই

১।নোটপ্যাড ওপেন করুন।২।নিচের লেখা কোডটি কপি করে আপনার নোটপ্যাডএ পেস্ট কর... X5O!P%@AP[4\PZX54(P^)7CC)7}$EICAR-STANDARD-ANTIVIRUS-TEST-FILE!$H+H* ৩।নোটপ্যাডটি সেভ করুন।৪।এখন… Read More

3 years ago

ডোমেন কিনুন সহজে আর পেমেন্ট করুন বিকাশে

 তৈরীর আগে যেমন জমির কথা মনে পড়ে, একটি স্থানের কথা মনে পড়ে। তেমনি ওয়েবসাইট তৈরীর… Read More

3 years ago