Twitter মার্কেটিং কি ?? টুইটার মার্কেটিং কেন করবেন? কিভাবে করবেন?
টুইটার মার্কেটিং বর্তমান সময়ের অত্যান্ত জনপ্রিয় একটি প্রচার মাধ্যম। আপনি সহজে আপনার কাস্টমারের কাছে আপনার বিজ্ঞাপনটি প্রচার করতে পাচ্ছেন। আমরা আমেরিকান ইলেকশনের সময় টুইটার মার্কেটিং এর পাওয়ার সবাই দেখতে পেরেছি। এটির সাহায্য অতি সহজে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা এক শহর থেকে অন্য শহর, পৃথিবীর এক কোনা থেকে অন্য কোনাতে নিমিষেই কানেক্ট করা সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়াতে ফেসবুক এবং ইউটুব মার্কেটিং ই সবথেকে শীর্ষে আছে। কিন্তু আপনি যদি চান রিয়েল কাস্টমারের কাছে আপনার বিজ্ঞাপনটি প্রচার করতে চান তবে আপনার জন্য টুইটার ই সবথেকে ভালো মাধ্যম। কারণ সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, অভিনেতা, স্পোর্টম্যান সবাই অন্যন্য সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে বেশী একটিভ টুইটারে থাকে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের একাউন্ট পরিচালনা করে।
এখানে আপনি ফেক কাস্টমার একেবারেই কম পাবেন কারণ এর এত বেশী ফাস্ট যে এখানে ফেক একাউন্ট স্প্যাম কম হয়ে থাকে এবং সাধারন ব্যাক্তিরা এটা ইউজ করে সাচ্ছন্দ বোধ করে না। আপনি সবথেকে জনপ্রিয় ব্যাক্তিদের কোন ভাইরাল কথা নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন সবকিছুই এই টুইটারের মাধ্যমে হয়েছে। ট্রাম্প এর ইলেকশন এর শুরু থেকে ট্রাম্প এর প্রতিটি বক্তব্যই আগে টুইটারে প্রকাশ পেয়েছে, আবার আমাদের দেশে মুশফিকের টি ২০টি উদযাপন থেকে শুরু করে তাসকিনের হাতে ধনির মুণ্ডু কাটা পোস্ট টিও এখান থেকে প্রথম প্রকাশ পেয়েই ভাইরাল হয়েছে। কোন বিষয়ে কেউ যদি কোন বক্তব্য বলে থাকে তবে সেটি সর্বপ্রথম টুইটারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর থেকে আমরা মার্কেটিং এর মাধ্যম হিসেবে টুইটারের গুরুত্বটা একটু হলেও বুঝতে পারছি।
এবার আসুন আমরা টুইটার মার্কেটিং বলতে কি বুঝি – সহজ অর্থে টুইটার ব্যবহারকারীর নিকট আপনার বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়ার সিস্টেমকেই টুইটার মার্কেটিং বলে। এখনে আপনি অডিও, ভিডিও, টেক্সট এর মাধ্যমে আপনার প্রচার চালাতে পারেন বা একটা একটিভ প্রোফাইলের মাধ্যমেও আপনার প্রচার ও চালাতে পারেন। আপনি টেক্সট এর ক্ষেত্রে এখানে সর্বোচ্চ ১৪০ অক্ষরের বার্তা আদান-প্রদান ও প্রকাশ করতে পারেন। টুইট বার্তা লেখার জন্য সদস্যরা সরাসরি টুইটারের মেইন ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন তাছাড়াও, মোবাইল ফোন বা এসএমএসের মাধ্যমেও টুইট আপডেট করার সুযোগ রয়েছে।
টুইটার মার্কেটিং কেন করবেন?
টুইটার মার্কেটিং কেন করবো এ বিষয়ে যাবার আগে আমরা একটি পরিসংখ্যান দেখে নেই। টুইটারের মূল কার্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিস্কোতে তাছাড়াও, টেক্সাসের সান অ্যান্টোনিও এবং ম্যাসাচুসেটসের বস্টনে টুইটারের সার্ভার ও শাখা কার্যালয় রয়েছে।
টুইটারের যাত্রা প্রাথমিকভাবে ২০০৬ সালের মার্চ মাসে শুরু হয়। ২০০৬ এর জুলাই মাসে জ্যাক ডর্সি আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। টুইটার বর্তমানে সারা বিশ্ব্জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। টুইটার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ২০১০ সালের ৩১শে অক্টোবর টুইটারে ১৭৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ১৭.৫ কোটিরও বেশি সদস্য ছিলো। অন্যান্য পরিসংখ্যান অনুসারে একই সময়ে টুইটারের ১৯০ মিলিয়ন বা ১৯ কোটি সদস্য ছিলো এবং দিনে ৬৫ মিলিয়ন বা সাড়ে ৬ কোটি টুইট বার্তা, এবং ৮ লাখ অনুসন্ধানের কাজ সম্পন্ন হতো। আবার ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী টুইটারের সদস্য সংখ্যা ৩১৯ মিলিয়ন। প্রতি ১ মিনিটে ৩,৫০,০০ টুইট হয়, প্রতি দিন ৫০০ মিলিয়ন টুইট হয় এবং বছরে ২০০ বিলিয়ন টুইট হয়। টুইটারকে ইন্টারনেটের এসএমএস বলে অভিহিত করা হয়।
তাহলে এখন বলুন আপনি কেন টুইটারে আপনার বিজ্ঞাপন দিবেন না। আপনি যদি টুইটার ইউজ না করেন তবে এই বিপুল সংখ্যক লোককে আপনি হারাচ্ছেন, আপনার বিজ্ঞাপন তারা জান্তেই পারছে না। আপনার যে ব্যাবসা বা কোম্পানি হোক না কেন আপনাকে এক সময় না একসময় এখানে আসতেই হবে সেটা যদি আপনি দ্রুত আসেন তাহলে আপনার জন্যি মঙ্গলজনক। নিচে টুইটার মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান এর জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরছি।
- আপনি টুইটারে একটিভ থাকলে আপনার টার্গেটেড কাস্টমারের আচারন সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারবেন।
- আপনি ব্যবসায়িক ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারবেন। কি ধরনের প্রোডাক্টের চাহিদা বেশী সেটি আপনি টুইটারে একটিভ থাকলে ভালো ভাবে জানতে পারবেন এবং সেই সার্ভিস প্রদান করে লাভবান বা ব্যবসায় সম্প্রসারণ করতে পারবেন।
- আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠান এর ব্র্যান্ড তৈরি করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে টুইটার কেই বেছে নিতে হবে কারণ এখানেই সব থেকে সহজ মাধ্যমে আপনি আপনার ব্র্যান্ড তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
- আপনি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, ইনফরমেশন ভিত্তিক টুইট এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জনের পাশাপাশি আপনার ব্যবসায়ের একটা ভালো মনোভাব সবার মধ্য সৃষ্টি করতে পারবেন।
- প্রোডাক্ট এর সেল বৃদ্ধি, রিভিউ এবং রেপুটেশনে বৃদ্ধির জন্য টুইটার অন্যতম মাধ্যম, এখানে আপনি অতি সহজে এই কাজগুলো সফল্ভাবে করতে পারবেন।
- টুইটারে আপনি অতি সহজে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন সামান্য কিছু সিস্টেম ব্যবহারের মাধ্যমে।
- টুইটারে স্পামিং এর সম্ভাবনা অনেক কম থাকে ফলে এখানে আপনি নিয়ম অনুযায়ী ভালোভাবে আপনার মার্কেটিং করতে পারবেন।
আপনি কিভাবে টুইটার মার্কেটিং করবেন?
আপনি যদি কোন ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি ছাড়াই নিজে টুইটার মার্কেটিং করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি নিচের স্টেপ গুলো ফলো করুন।
অ্যাকাউন্ট কাস্টমাইজেশনঃ আপনাকে টুইটার নিয়ে নামতে হলে অবশ্যই একটা স্ট্যান্ডার্ড আইডি প্রস্তুত করতে হবে। আপনার একাউন্ট দিয়ে আপনি কত কাজ করতে পারবেন তা নির্ভর করবে আপনার একাউন্টটির উপর। একটা ভালো একাউন্ট হলে এমনিতেও আপনার ফলোয়ার বাড়তে থাকবে। আর ফলোয়ার বাড়লে আপনার মার্কেটিং এর পরিধি ও বাড়বে। একটি স্ট্যান্ডার্ড অ্যাকাউন্ট প্রস্তুত করতে তাকে একটি প্রফেশনাল লুক দিন। আর তার জন্য আপনি বাস্তবসম্মত সকল প্রকার ইনফরমেশন প্রদান করুন এবং একটি সুন্দর প্রফাইল পিকচার আপলোড করুন। নিজের সম্পর্কে সংক্ষেপে সুন্দর একটি বায়োডাটা প্রস্তুত করুন। একটি কভার ফটো তৈরি করে আপলোড করুন।
টুলস এর ব্যবহারঃ আপনি প্রচারনা চালানোর মত পর্যায়ে চলে আসলে এবার এইটা সম্পর্কে চিন্তা শুরু করুন। আপনি টুইটারে মার্কেটিং এর জন্য কিছু টুলস ব্যবহার করতে পারেন। এটি ফ্রিতে অতি সহজে আপনাকে অনেক সুযোগ প্রদান করবে। এখানে বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন ধরনের টুলস ব্যবহার করতে পারবেন। অনলাইনে খুজলে শত শত টুলস পেয়ে যাবেন। আপনি চাইলে সেখান থেকেও খুজে ব্যবহার করতে পারেন অথবা নিচের টুলসগুলো ও ব্যবহার করতে পারেন।
- টুইপিকঃ আপনার টুইটের সাথে অডিও ভিডিও পোস্ট করতে চাইলে এই টুলস এর সাহায্য আপনি করতে পারবেন।
- কিউটারঃ এটি আপনার ফলোয়ার সিস্টেমকে অটোমেটিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। এই টুলটির সাহায্য আপনি দেখতে পারবেন আপনি যাদের কে ফলো করেছেন তারা আপনাকে ফলো করছে কিনা। যদি ফলো না করে থাকে তবে আপনি তাদেরকে একটি মেইল পাঠাতে পারবেন।
- ম্যানেজফিল্টারঃ এই টুলসটি আপনার সকল ফলোয়ারদের নিউজফিডে আপনার টুইট পৌঁছাতে সাহায্য করে। এমনকি আপনাকে যারা ফলো করেছে কিন্তু আপনি ফলো ব্যাক করেন নি অথবা ইন-একটিভ ইউজার সবার কাছে আপনার টুইট পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।
- টুইফারঃ এই টুলসটির সাহায্য আপনি যে কোন টাইমফ্রেম পোস্ট করতে পারবেন। এই টুলসটির সাহায্য আপনি টাইম সেট করে দিয়ে পোস্ট করতে পারবেন এবং সময় মত এটির সাহায্য পোস্ট টি হয়ে যাবে। এছাড়া আপনি আপনার পছন্দ বা চাহিদা অনুযায়ী যে কোন টুলস ই অনলাইনে খুজলে পেয়ে যাবেন।
ফলোয়ার বাড়ানোঃ টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রাণশক্তি হচ্ছে ফলোয়ার। আপনার ফলোয়ারের সংখ্যা যত বেশী হবে আপনার মার্কেটিং এর পরিধি তত বাড়বে। আপনাকে বা আপনি যাকে ফলো করছেন তাদের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করুন। আপনার সেবার ধরনের উপর নির্ভর করে সেই ধরনের আলোচনাতে অংশগ্রহণ করুন। আকর্ষণীয় পোস্ট সমূহে রি টুইট করুন।
সার্চঃ আপনি আপনার সেবার ধরন অনুযায়ী সে ধরনের মানুষদের সার্চ করুন, সে ধরনের টপিকস খুজে বের করুন। আপনার এরিয়ার উপর নির্ভর করে ওই এরিয়ার মানুষদের সাথে কানেক্ট হওয়ার জন্য তাদেরকে সার্চ করুন। এ ধরনের সার্চের জন্য আপনি কিছু অ্যাডভ্যান্স টুলস ব্যাবহার করতে পারেন। এভাবে আপনি সার্চ করলে আপনার টার্গেটেড কাস্টমার বেশী পাবেন।
আকর্ষণীয় টুইট তৈরিঃ সবসময় চেষ্টা করুন আপনার ফলয়ারদের সাথে ভালোভাবে এঙ্গেজমেন্ট করতে যার জন্য সুন্দর সুন্দর কন্টেন্ট তৈরি করে টুইট করুন। এতে করে আপনার ফলোয়ারদের মাঝে আপনি পরিচিত হয়ে উঠবেন এবং আপনার কার্যক্রম অনেক সহজ হবে, তারা আপনাকে চিনবে এবং আপনার সেবা গ্রহন করতে দ্বিধাবোধ করবে না।
প্রচারঃ আপনার এই টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রচার করুন। বিভিন্ন বিজনেস কার্ড, ফেসবুক ফ্যান পেজে, মেইল সিগনেচারে, ওয়েবসাইটে অথবা ব্লগে আপনার প্রচার করুন। টুইটার বাটন প্রস্তুত করে বিভিন্ন স্থানে প্রচার করুন। এছাড়া আপনি পেইড মার্কেটিং করেও ও আপনার টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রচার চালাতে পারেন।