সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং মাধ্যম সমূহ।
যে মাধ্যমে অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েব সাইটের সাহায্য নিয়ে নিজের ওয়েবসাইট, পন্য অথবা সার্ভিস সমূহের প্রচার প্রচারনা করা যায় তাকে সাধারণ ভাষায় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে। আর যে সকল সাইট এর সাহায্য এই মার্কেটিং করা হয়ে থাকে তাকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং মাধ্যম সমূহ বলে। অনলাইনে নিজের ওয়েবসাইট, পণ্য, সেবা বা কোন বিষয়ের প্রচার প্রচারনার জন্য রয়েছে নানা মাধ্যম যেগুলার মধ্য সোস্যাল মিডিয়া মার্কেটিং খুবই সহজ এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি যেখানে খুব সহজেই ওয়েব সাইটের প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর প্রধান উদেশ্য হল বিভিন্ন প্লাটফর্ম যেমন ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস, লিংকডইন, পিন্টারেস্ট এবং আরো অনেকগুলোতে টার্গেটেড সোশ্যাল মিডিইয়াতে তাদের নিজেদের প্রচার বৃদ্ধি করে মার্কেটিং এর লক্ষ্যকে পুরন করা।
নিম্নে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর সবথেকে জনপ্রিয় কয়েকটি মাধ্যম সম্পর্কে আলোচনা করা হোল।
ফেসবুক মার্কেটিং সার্ভিস
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর প্রাই প্রতিটা দেশে এর জনপ্রিয়তা অনেক অনেক বেশী। ফেসবুকের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারির কাছে কোন প্রতিষ্ঠান, পন্য বা সেবার প্রচারণা করে দেয়াকেই ফেসবুক মার্কেটিং করে। এটি আপনি নিজে বা কোন ফেসবুক মার্কেটারের মাধ্যমেও করতে পারেন। সহজ অর্থে ফেসবুকে যে বিজ্ঞাপন দেয়া হয় তাকেই ফেসবুক মার্কেটিং বলে। যে কোন ধরণের বিজ্ঞাপন ই ফেসবুকে টাকার মাধ্যমে দেয়া যায়। এ ধরণের বিজ্ঞাপন সাধারণত আপনার ফেসবুক নিউজফিডে বিভিন্ন পন্যের স্পন্সরড পোষ্ট আসে এবং আপনার ফেসবুক এর ডান পাশে বিভিন্ন পন্যের ছবি বা অফার আসে আর এগুলকেই ফেসবুক বিজ্ঞাপন বলে।
২০১৬ সালের জরিপ অনুস্বার ফেসবুকের মাসিক একটিভ ব্যবহার কারির সংখ্যা ১.৮৬ বিলিয়ন। প্রতিদিন ফেসবুক ইউজারের সংখ্যা ১.১৫ বিলিয়ন। মোবাইলে ফেসবুক ইউজ করে এমন ইউজারের সংখ্যা ১.৭৪ । ফেসবুকে প্রতিদিন ছবি আপলোড এর সংখ্যা ৩০০ মিলিয়ন। ফেসবুকে প্রতি ভিজিটরের এভারেজ টাইম স্পেন্ড ২০ মিনিট। প্রতি মিনিটে ৫,১০,০০০ কমেন্টস, ২,৯৩,০০০ স্ট্যাটাস এবং ১,৩৬,০০০ ছবি আপলোড হয়ে থাকে। ফেসবুকে ১৬ মিলিয়ন লোকাল বিজনেস পেজ তৈরি করা হয়েছে। ৪২ % ব্যবসায়ী মনে করেন ফেসবুক তাদের বিজনেসের প্রধান হাতিয়ার। ১৮-২৪ বছর বয়সী ব্যবহারকারীর মধ্য ৫০% ব্যবহারকারী ঘুম থেকে উঠেই ফেসবু ব্যবহার করে বা বলা যায় ফেসবুকে এসেই তাদের ঘুম ভাঙ্গে। এক প্রতিবেদনে বলা হয় ফেসবুক ব্যবহার কারি প্রতি বছর ১৭% হারে বাড়ে এবং এটি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
একটু চিন্তা করুন ২০১৭ সালে ফেসবুকের একটিভ ব্যবহারকারী ১৮৬ কোটি । এখন আপনি নিজেই ভাবুন আপনি কেন ফেসবুক মার্কেটিং করবেন না।
ইউটুবঃ
বর্তমান সময়ের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং মাধ্যম হল ইউটুব মার্কেটিং। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ সবথেকে বেশী কার্যকারী মাধ্যম হল ইউটুব মার্কেটিং। ইন্টারনেট এর সহজলভ্যতা যত বেশী বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে ইউটুব মার্কেটিং এর কার্যকারিতা তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আপনি খুব সহজে একটি ভিডিও ভাইরাল করার মাধ্যমে আপনি আপনার কোম্পানির বা ওয়েবসাইটের প্রচারও বাড়াতে পারবেন। ২০১৭ সালের হিসাব অনুসারে ইউটুব ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১,৩০০,০০০,০০০। প্রতিদিন প্রায় ৫ বিলিয়ন ইউটুব ভিডিও দেখা হয়। প্রতিদিন ৩০ মিলিয়ন ভিজিটর আসে। এই এত ট্রাফিক এর কারনেই ইউটুব এই মুহূর্তে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সব থেকে বড় মাধ্যম।
ইন্সটাগ্রামঃ
বর্তমান সময়ের অন্যতম আরেকটি জনপ্রিয় ফোটো শেয়ারিং এর মাধ্যমের নাম ইন্সটাগ্রাম। বর্তমানে ৬০০ মিলিয়ন ইনিস্টাগ্রামের একটিভ ইউজার আছে। প্রতিদিনের হিসাব অনুযায়ী ৪০০ মিলিয়ন একটিভ ইউজার আছে। ১৫০ মিলিয়ন ইউজার তাদের স্টোরি প্রতিদিন ইন্সটাগ্রামে শেয়ার করে থাকে। টোটাল ইন্টারনেট ইউজারের ২০% মানুষ ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করে। এত কিছুর পরেও আপনি কিভাবে ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং না করে বসে থাকবেন। আপনি ইন্সটাগ্রাম মার্কেটিং না করলে এই ২০% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আপনার এই বিজ্ঞাপনটি সম্পর্কে জানতেই পারবে না।
গুগল প্লাস
প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলের সামাজিক যোগাযোগ সেবা গুগল প্লাস। এতে ১০০ কোটির বেশি নিবন্ধিত ও নিয়মিত ৬০ কোটির অধিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। প্রতিনিয়ত এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গুগল অথরশিপ হওয়ার এটি অনলাইন মার্কেটিংয়ের একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে। এই সাইটে কোনো কিছু শেয়ার করলে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসই) এর দিক থেকে অনেক সুবিধা দেয়। গুগল প্লাস থেকে আপনি কি সুবিধা পাবেন তা দেখে নেওয়া যাক।
• ব্যবহারকারীদের ব্র্যান্ড পেইজ তৈরি করার সুযোগ আছে।
• পেইজে কাস্টোমাইজড কাভার টেমপ্লেট ও থাম্বনেইল ব্যবহার করার সুযোগ আছে।
• কনট্যাক্ট, ওয়েবসাইট ও জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশনসহ আপনার ব্যবসায়ের বিস্তারিত তথ্য এখানে যুক্ত করতে পারবেন।
• আপনার সার্কেলে থাকা মানুষগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাজাতে পারবেন। পরবর্তীতে ঐ নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্য করে কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন।
• আপনার ব্র্যান্ডের জন্য একটি গুগল প্লাস পেইজ ইউনিক ইউআরএল পেতে পারেন।
• পেইজে বিভিন্ন ওয়েবমাস্টার ও এপিআই কনসোল সেবা পাবে, যা আপনার ব্র্যান্ড বা সেবাকে অন্যান্য অনলাইন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
লিংকডইন
প্রায় ২৮ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে লিংকডইন বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট। এতে আপনার প্রফেশনাল প্রোফাইল তৈরি করার ও কমিউনিটি তৈরির সুযোগ পাবেন। লিংকডইনও আপনার পণ্য বা সেবার জন্য ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি তৈরির সুযোগ সুবিধা দেয়। এই সাইট থেকে আপনি কি কি সুবিধা পাবেন –
- এখানে আপনার ব্র্যান্ডের জন্য গ্রুপ তৈরি ও সংযুক্তদের সঙ্গে তা প্রোমোট করতে পারবেন।
- তৈরি করা ব্র্যান্ড গ্রুপকে নিজের মতো সাজাতে পারবেন।
- আপনার গ্রুপে যারা আছে তাদের মাধ্যমেই নতুন কানেকশনের সাজেশন পাবেন। যার মাধ্যমে আপনার নেটওয়ার্ক আরও বৃদ্ধি পাবে।
- আপনার ব্যবসায়ের ধরণ অনুযায়ী সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট খুজে নিতে পারবেন।
- সহজে ইমেল কালেক্ট করে ই মেইল করতে পারবেন তাদের কাছে।
টুইটার
টুইটার ব্যবহারকারীর নিকট আপনার বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেয়ার সিস্টেমকেই টুইটার মার্কেটিং বলে। এখনে আপনি অডিও, ভিডিও, টেক্সট এর মাধ্যমে আপনার প্রচার চালাতে পারেন বা একটা একটিভ প্রোফাইলের মাধ্যমেও আপনার প্রচার ও চালাতে পারেন। আপনি টেক্সট এর ক্ষেত্রে এখানে সর্বোচ্চ ১৪০ অক্ষরের বার্তা আদান-প্রদান ও প্রকাশ করতে পারেন। টুইট বার্তা লেখার জন্য সদস্যরা সরাসরি টুইটারের মেইন ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন তাছাড়াও, মোবাইল ফোন বা এসএমএসের মাধ্যমেও টুইট আপডেট করার সুযোগ রয়েছে।
২০০৬ এর জুলাই মাসে জ্যাক ডর্সি আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। টুইটার বর্তমানে সারা বিশ্ব্জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। টুইটার বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ২০১০ সালের ৩১শে অক্টোবর টুইটারে ১৭৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ১৭.৫ কোটিরও বেশি সদস্য ছিলো। অন্যান্য পরিসংখ্যান অনুসারে একই সময়ে টুইটারের ১৯০ মিলিয়ন বা ১৯ কোটি সদস্য ছিলো এবং দিনে ৬৫ মিলিয়ন বা সাড়ে ৬ কোটি টুইট বার্তা, এবং ৮ লাখ অনুসন্ধানের কাজ সম্পন্ন হতো। আবার ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী টুইটারের সদস্য সংখ্যা ৩১৯ মিলিয়ন। প্রতি ১ মিনিটে ৩,৫০,০০ টুইট হয়, প্রতি দিন ৫০০ মিলিয়ন টুইট হয় এবং বছরে ২০০ বিলিয়ন টুইট হয়। টুইটারকে ইন্টারনেটের এসএমএস বলে অভিহিত করা হয়।
• টুইটারে আপনার নিজের নামে একটি ইউনিক ইউআরএল পাবেন।
• এতে আপনার ব্যবসায়ের ধরন বা পছন্দ অনুযায়ী প্রোফাইল ছবি, হেডার ছবি এবং ব্যাকগ্রাউন্ড দিতে পারবেন।
• আপনার ব্যবসায়ের ওয়েবসাইট যুক্ত করতে পারবেন সাইটটিতে, যা ব্যবহারকারীদের সরাসরি ভিজিট করার সুযোগ দেবে।
• আপনার ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটে টুইটার এপিআই উইজেট ব্যবহার করতে পারবেন।
• হ্যাশট্যাগ, অ্যাট (@) ইত্যাদি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে আপনার কাঙ্খিত ব্যাক্তি বা কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ সমন্বয় করতে পারেন।
পিন্টারেস্ট
এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া সোশ্যাল বুকমার্কিং সেবার সাইট। বর্তমানে প্রায় ৮ কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে সাইটটির। ছবি ভিত্তিক এই ওয়েবসাইটটি আপনার পণ্য ও সেবার অনলাইন মার্কেটিংয়ে সবচেয়ে কাজে দিবে। এখানে আপনি যা যা সুবিধা পাবেন:
• এই নেটওয়ার্কে আপনার বিজনেস প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন।
• এটি আপনার ব্যবসায়ের নামানুসারে একটি পার্সোনালাইজড ইউজার নেম দেয়।
• এখানে আপনার অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া লিংক যুক্ত করতে পারবেন। যেমন এই সাইটের সঙ্গে আপনার ফেইসবুক প্রোফাইল যুক্ত থাকলে আপনি যখনই কোনো ছবি পিন করবেন, তখন এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ফেইসবুকে শেয়ার করে দিবে। আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকলে এই সাইট থেকে ডুফলো ব্যাকলিংক পেতে পারেন।
আমরা আগামি পর্বে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং মাধ্যম সমূহ গুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে বিস্তারিত লেখা প্রকাশ করা হবে, আমাদের সাথেই থাকুন।