গতবছর স্মার্টফোনের রাজ্যে বেজেললেস ডিসপ্লে কিংবা নচ এর মত নতুন কিছু ডিজাইন ট্রেন্ড এসেছিল। সেই সাথে ডুয়াল/ট্রিপল ক্যামেরায় বোকেহ ইফেক্ট অথবা ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করার ফিচারটিও খুব হাইপ তৈরি করেছিল। ২০১৯ সালে এসে এই ফিচারগুলোরই একটু উন্নত রূপ দেখা যাচ্ছে ফোনগুলোতে।
তো চলুন এক নজরে ২০১৯ সালে (এখন পর্যন্ত বাজারে আসা) বিশ্বের সেরা স্মার্টফোনগুলো দেখে নিই।
১২। শাওমি মি৯
বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন তালিকার ১২ নম্বরে আছে শাওমির লেটেস্ট ফ্ল্যাগশিপ মি ৯। ফোনটিতে সিস্টেম অন চিপ হিসেবে আছে কোয়ালকম এর লেটেস্ট ফ্ল্যাগশিপ স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫। ৮ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট এ পাওয়া যাচ্ছে ফোনটি। ইন ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এর সাথে ৬.৪ ইঞ্চির এমোলেড প্যানেল পাচ্ছেন ফোনটিতে। থাকছে ছোট্ট একটি ওয়াটারড্রপ নচ।
এর পিছনে যথাক্রমে ৪৮, ১৬ ও ১২ মেগাপিক্সেলের তিনটি ক্যামেরা ও সেলফির জন্য সামনে একটি ২০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা রয়েছে। এর ৩৩০০ মিলিএম্প এর ব্যাটারিটি ২০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সমর্থন করে। মি ৯ ট্রান্সপারেন্ট এডিশন নামে এটার আরেকটা ভার্সন আছে যার ব্যাক প্যানেল স্বচ্ছ কাঁচে তৈরী। এর দাম শুরু ৩০০০ চাইনিজ ইউয়ান থেকে।
১১। অপো রেনো ১০এক্স জুম
বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন তালিকার ১১ নম্বরে থাকা অপোর এই ফ্ল্যাগশিপটিতে ত্রিকোণাকৃতি পপ আপ ক্যামেরা সিস্টেম রয়েছে। এর ক্যামেরাতে ১০ গুন জুম করার ক্ষমতা সম্পন্ন পেরিস্কোপ লেন্স আছে। ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি, ১৩ মেগাপিক্সেল সেকেন্ডারির সাথে ৮ মেগাপিক্সেল ওয়াইড এঙ্গেল ক্যামেরা থাকছে এতে। এর ফ্রন্ট ক্যামেরাটি ১৬ মেগাপিক্সেল এর। ৬.৬৫ ইঞ্চির সুপার এমোলেড ডিসপ্লেটি এইচডিআর ১০ সমর্থিত। ৮ জিবি র্যাম ও ২৫৬ জিবি স্টোরেজ এর সাথে থাকছে ৪০০০ মিলিএম্প এর ব্যাটারি যা অপোর নিজস্ব VOOC ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে। এর দাম শুরু ৩০০০ চাইনিজ ইউয়ান থেকে। ফোনটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
১০। আইফোন ১০আর
মূলত অ্যাপল এর চলতি ফ্ল্যাগশিপকেই একটু কাটছাঁট করে ফোনটি ডেভেলপ করা হয়েছে। তারপরও বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন তালিকায় এটি আসতেই হবে! অ্যাপলের ফ্ল্যাগশিপ এ১২ বায়োনিক চিপ, ফেইস আইডি, সামনে ১২ ও পিছনে ৭ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা থাকলেও এর ৬.১ ইঞ্চির ডিসপ্লেটি শুধুই এইচডি রেজ্যুলেশনের হওয়াতে তালিকার নিচের দিকে থাকছে ফোনটি। ফোনটির বেইজ মডেল ৬৪ জিবি স্টোরেজ ও ৪ জিবি র্যাম নিয়ে পাওয়া যাচ্ছে। এর দাম শুরু ৭৪৯ ইউএস ডলার থেকে।
৯। সনি এক্সপেরিয়া ১
এটি সনির নতুন ফ্ল্যাগশিপ লাইনআপ এর প্রথম ফোন। বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন তালিকায় এটিও স্থান পাবে। এটি একটি মিডিয়া ডিভাইস বলা যায়। ৬.৫ ইঞ্চির সিনেমাটিক রেশিও এর ফোরকে ওলেড ডিসপ্লে আছে ফোনটিতে। স্নাপড্রাগন ৮৫৫ চিপসেটের সাথে এতে থাকছে ৬ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ। এর পিছনে ৩ টি ১২ মেগাপিক্সেলের সেন্সর আছে যেগুলোর ধরন যথাক্রমে নরমাল, ওয়াইড এঙ্গেল ও টেলিফটো। ৩৩০০ মিলিএম্প ব্যাটারি থাকা ফোনটির দাম শুরু ৮০০ ইউএস ডলার থেকে।
৮। এলজি জি৮ থিংক
এটা তাদের গতবছরের ফ্ল্যাগশিপ জি৭ থিংক এর আপগ্রেড। বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন তালিকায় এটিকেও আসতে হবে। এতে থাকছে ২০১৯ সালের ফ্ল্যাগশিপ চিপ স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫, ৬ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ। আইপি রেটেড এই ফোনটির ৬.১ ইঞ্চির ওলেড প্যনেলটি কিউএইচডি প্লাস রেজ্যুলেশনের। এর পিছনে ১২ মেগাপিক্সেলের প্রাইমারি, ১৬ মেগাপিক্সেলের সুপার ওয়াইড এঙ্গেল ও ১২ মেগাপিক্সেলের টেলিফটো লেন্স আছে। ৩৫০০ মিলিএম্প ব্যাটারির এই ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে ৮৯৭৬০০ কোরিয়ান ওয়োন থেকে।
৭। ওয়ানপ্লাস ৭
ওয়ানপ্লাস ৭ কে গত বছরের ওয়ানপ্লাস ৬টি এর সামান্য আপগ্রেড বলা যায়। ওয়ানপ্লাস ৭ প্রো এর মতো পারফর্মেন্স নিয়ে আসলেও ডিজাইন আর ক্যামেরার জন্য দামটা ৭ প্রো এর চেয়ে কম। ৭ প্রো কে অনেকে বেশি দামের ডিভাইস বললেও ওয়ানপ্লাস ৭ যে বরাবরের মতোই “বেস্ট ভ্যালু ফর মানি” তাতে কারো দ্বিমত নেই। স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫, ৮ জিবি র্যাম আর ২৫৬ জিবি স্টোরেজের সাথে এতে থাকছে সনির ৪৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। বিস্তারিত এখানে দেখুন।
৬। গুগল পিক্সেল ৩ ও পিক্সেল ৩ এক্সএল
গুগলের কম্পিউটেশনাল ফটোগ্রাফির বদৌলতে পিক্সেল ফোনগুলো গ্রাহকদের পছন্দের শীর্ষে থাকে। তাই বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন তালিকায় এটি থাকবেই। গুগলের লেটেস্ট ফ্ল্যাগশিপ পিক্সেল ৩ ও পিক্সেল ৩ এক্সএল ও বরাবরের মতোই চমৎকার ছবি তুলে। অবশ্য গত বছরের ফোন হওয়াতে ফোনগুলোতে থাকছে একটু কম ক্ষমতাসম্পন্ন স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেট। ৫.৫ ইঞ্চির এমোলেড ডিসপ্লে, ৪ জিবি র্যাম ও ১২৮ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজে পাওয়া যাচ্ছে ফোনটি।
১২ মেগাপিক্সেলের একমাত্র ব্যাক ক্যামেরা ও ৮ মেগাপিক্সেলের দুটো ফ্রন্ট ক্যামেরা নিয়ে এসেছে ফোনটি। এর ব্যাটারি ৩০০০ মিলিএম্প এর। পিক্সেল ৩ এর সাথে একই স্পেসিফিকেশন তবে তুলনামূলক বড় নচওয়ালা ডিসপ্লে ও বড় ব্যাটারি নিয়ে এসেছে পিক্সেল ৩ এক্সএল। ফোনগুলোর দাম শুরু ৮৫০ ইউরো থেকে।
৫। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস১০ ই
এটিও আইফোন ১০আর এর মতো স্যামসাং ফ্ল্যাগশিপগুলোর কাটছাঁট করা ভার্সন। তারপরেও সবচেয়ে ভাল মোবাইল এর লিস্টে এটি রাখতেই হচ্ছে। গ্যালাক্সি এস১০ কিংবা এস ১০ প্লাস এর মতোই ক্ষমতাসম্পন্ন ফোনটির ডিসপ্লে আর ব্যাটারি তুলনামূলক ছোট (৩১০০ মিলিএম্প এর)। এর ৫.৮ ইঞ্চির ডিসপ্লেটি কার্ভড ও নয়। ক্যামেরা এস ১০ এর মতো হলেও সাথে থাকছে না কোন টেলিফটো লেন্স। ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে ৭৫০ ইউএস ডলার থেকে।
৪। ওয়ানপ্লাস ৭ প্রো
দামটা আর সব ওয়ানপ্লাস এর চেয়ে বেশি হলেও স্যামসাং কিংবা অ্যাপলের চেয়ে বেশ কম। তার চেয়ে বড় কথা হলো কোনদিক থেকেই কমতি নেই ফোনটিতে। দুর্দান্ত স্পিড, অসাধারণ ডিজাইন আর সবমিলিয়ে সেরা পারফর্মেন্স নিয়ে এসেছে ফোনটি। স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫, ১২ জিবি র্যাম আর ২৫৬ জিবি স্টোরেজ আছে ফোনটিতে। সেই সাথে সনির ৪৮ মেগাপিক্সেল সেন্সর আর পপ আপ ক্যামেরাসহ অসাধারণ ৯০ হার্টজ ডিসপ্লে ফোনটিকে বেশ ভালো অবস্থানেই রেখেছে। বিস্তারিত এখানে দেখুন।
৩। আইফোন ১০এস ও ১০এস ম্যাক্স
মজার ব্যাপার হলো, আগের বছর রিলিজ হওয়া আইফোন টেন থেকে প্রসেসর বাদে খুব বেশি কোনো উন্নয়ন না থাকা সত্বেও ফিচার ও চাকচিক্য দিয়ে অন্য যে কোনো স্মার্টফোন থেকে এটি এগিয়ে আছে। ফলে বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন তালিকায় এটাকে রাখতেই হবে! ৫.৮ ইঞ্চি সাইজের অ্যাপলের বিখ্যাত সুপার রেটিনা ডিসপ্লে নিয়ে এসেছে আইফোন টেনএস, যা একই সাথে এইচডিআর ও থ্রিডি টাচ সাপোর্টেড। এর সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে এ১২ বায়োনিক চিপ যা লেটেস্ট এন্ড্রয়েড ফ্ল্যাগশিপ গুলোতে ব্যবহৃত স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপ থেকে বেশি শক্তিশালী।
৪ জিবি র্যাম ও ৫১২ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ অপশন আছে আইফোন টেনএস এ। সাথে প্রথমবারের মত কোন অ্যাপল ফোনে ডুয়াল সিম ক্যাপাবিলিটিও নিয়ে আসছে এটি। স্টেইনলেস স্টিল ফ্রেম ও গ্লাস-ফিনিশ বডির পিছনের দিকে রয়েছে ডুয়াল ক্যামেরা সেটআপ। পাশাপাশি এটি আইপি ৬৮ রেটেড পানিরোধী বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। রয়েছে আগের আইফোনগুলো থেকে অধিক ব্যাটারি ক্যাপাসিটি। সাথে ওয়্যারলেস চার্জিং তো আছেই। অন্যদিকে একই স্পেসিফিকেশন নিয়ে আসা টেনএস ম্যাক্স এর ব্যাটারি ক্যাপাসিটি একটু বেশি আর ডিসপ্লে সাইজ বাড়িয়ে ৬.৫ ইঞ্চি করা হয়েছে। ফোনগুলোর দাম শুরু ৯৯৯ ডলার থেকে।
২। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস১০ ও এস১০+
বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন তালিকায় স্যামসাং গ্যালাক্সি এস সিরিজ থাকা অত্যাবশ্যক! স্যামসাং এর এই লেটেস্ট ফ্ল্যাগশিপগুলো দেখতে খুবই চমৎকার। বিশেষ করে এদের ডিসপ্লেতে থাকা লেজার কাট ক্যামেরা হোল গুলো। স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫, ৮ জিবি র্যাম, ৫১২ জিবি স্টোরেজ আর সাথে থাকছে ৬.১ ইঞ্চির ডায়নামিক এমোলেড ডিসপ্লে। ১২, ১২ ও ১৬ মেগাপিক্সেলের ট্রিপল ক্যামেরা আর সাথে ১০ মেগাপিক্সেলের একটি সেলফি ক্যামেরাও আছে ফোনটিতে। এর ডিসপ্লেতে আল্ট্রাসনিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরও আছে।
ফোনটির ব্যাটারি ক্যাপাসিটি ৩৪০০ মিলিএম্প এর। অন্যদিকে এটারই একটু বড় ভার্সন এস১০+ এ থাকছে ৬.৪ ইঞ্চির কিউএইচডি প্লাস ডিসপ্লে, ডুয়াল সেলফই ক্যামেরা, ১২ জিবি র্যাম আর ১ টেরাবাইট স্টোরেজ। এর ব্যাটারিটিও অপেক্ষাকৃত বড় ৪১০০ মিলিএম্প এর। ফোনগুলোর দাম শুরু ৯৯৯ ডলার থেকে।
১। হুয়াওয়ে পি৩০ প্রো
২০১৯ এর সেরা ফোন এটি এতে কারো কোন দ্বিমত থাকার কথা না। বিশেষ করে এর ক্যামেরা বিবেচনায়। ৬.৪৭ ইঞ্চি ডিসপ্লের ফোনটি এসেছে বাজারের অন্যতম দ্রুতগতির প্রসেসর হুয়াওয়ের নিজস্ব কিরিন ৯৮০ চিপসেট নিয়ে। ৮ জিবি র্যাম, ৪২০০ মিলিএম্প ব্যাটারি আর ৫১২ জিবি স্টোরেজ নেহাত সাধারণ মনে হলেও এর ক্যামেরাতেই থাকছে চমক। ৪০ মেগাপিক্সেল মেইন সেন্সর, ২০ মেগাপিক্সেল আলট্রাওয়াইড, ৮ মেগাপিক্সেল টেলিফটো আর সাথে ত্রিমাত্রিক একটি ডেপথ সেন্সরও আছে। এর টেলিফটো ক্যামেরাটি ৫ গুন পর্যন্ত লসলেস অপটিক্যাল জুম এবং ৫০ গুন পর্যন্ত ডিজিটাল জুম করতে পারে। সাথে আছে অসাধারণ লো লাইট ছবি তোলার ক্ষমতা। ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে ৮৮০ ইউরো থেকে। বিশ্বের সেরা স্মার্টফোন তালিকার সবার শীর্ষে তাই হুয়াওয়ে পি৩০ প্রো রাখা হল। আপনার কী মতামত? কমেন্টে জানান!
আপনি অনলাইনে যতগুলো স্মার্টফোন র্যাংকিং পাবেন, তা একটা আরেকটার সাথে মিলবেনা। এমনকি আপনার নিজের বিবেচনায়ও হয়ত আলাদা র্যাংকিং চলে আসবে। এই তালিকায় থাকা প্রতিটি ফোনই অসাধারণ। বিক্রেতাভেদে এদের দাম ভিন্ন হতে পারে। বাংলাটেক টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে প্রযুক্তি বিষয়ক আরো অনেক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইল ইনবক্সে পেতে আমাদের সাইটটি ফ্রি সাবস্ক্রাইব করে নিন।
তো, আপনার দৃষ্টিতে ২০১৯ এর সেরা ফোন কোনটি? কমেন্টে জানিয়ে দিন! ধন্যবাদ।
Khan Shihab
Visitor Rating: 5 Stars