সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও অনেকাংশে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত। গুগল নিয়মিতভাবে তার এলগরিদমকে আপডেট করে যাচ্ছে।গুগলের নিয়মের বহির্ভুত কাজের জন্য গুগলের আপনার সাইটকে যে কোন মুহুর্তে ডাউন করতে পারে তাতে আপনার ওয়েবসাইটে অর্গানিক ভিজিটর সংখ্যা হ্রাস পাবে্। আবার দুর্বল কন্টেন্ট, জটিল নেভিগেশন, অপ্রয়োজনীয় বিজ্ঞাপন ও পপ আপের কারনে ব্যবহারকারী আপনার সাইট ভিজিটে অনাগ্রহ দেখাতে পারে।
আপনার সব কিছূ ঠিক থাকার পর আপনার সাইটটি যদি র্যাংকিং এ না আসে কিংবা ধীরে ধীরে ডাউন হয়ে যায় তবে তারও অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে।
গুগল র্যাংকিং হারানো , শনাক্তকরণ ও প্রতিকার
আপনার ওয়েবসাইটটি কিওয়ার্ড সার্চের জন্য অপটিমাইজড নয়
আপনার সাইটে যদি নিদির্ষ্ট কোন কিওয়ার্ড না থাকে তবে আপনার সাইটটি গুগল র্যাংকিং এ ডাউন হতে পারে। তাই কিওয়ার্ডের যথার্থ ব্যবহার করুন । কিওয়ার্ডের যথার্থ ব্যবহার মানে অধিকমাত্রায় অপ্রয়োজনীয়ভাবে কিওয়ার্ডের ব্যবহার নয়। অধিকমাত্রায় কিওয়ার্ডের ব্যবহারও গুগলে শাস্তি (penalize) পাওয়ার একটি কারণ।
শনাক্তকরণ
আপনার সাইটের মেটা ট্যাগ গুলো চেক করুন। এইচটিএমএল হেড সেকশনে মেটা ট্যাগ গুলো কি সঠিকভাবে আছে কিনা ? বিভিন্ন গ্রাফিক্সে যা গুগল টেক্সট হিসাবে পড়তে পারে না সেগুলোতে Alt ট্যাগ আছে কিনা ? আপনার কন্টেন্ট কি কপিরাইটেড বা অন্য কারও থেকে কপিকৃত কিনা ?
সমাধান
গুরুত্ব অনুসারে আপনার টার্গেটেড কিওয়ার্ডগুলো অবশ্যই থাকা উচিত
ক. পেজ টাইটেল
খ. h1 এবং h2 ট্যাগে
গ. কন্টেন্টে
ঘ. মেটা ডিস্ক্রিপশেন
এই সম্পর্কিক কিছু কথা
গুগল কিওয়ার্ডের প্রতি এখন গুরুত্ব প্রদান করে না । বরং কিওয়ার্ডের অভ্যন্তরীন অর্থের প্রতি গুরুত্বপ্রদান করে।
জেসন ডিমারের(লিংক) মতে , আপনি কিওয়ার্ডে কি শব্দ ব্যবহার করলেন তা কোন বিষয় না । যেমন “auto Repair Shop” শব্দটি বারবার ব্যবহার করার চেয়ে আপনি “Auto Repair Shop” , “car Repair Specilists” এবং “Vehicle Repair Facility” ইত্যাদি বিভিন্ন পেজে ব্যবহার করতে পারেন । গুগল সব গুলো কিওয়ার্ডের জন্য আপনাকে একই ক্যাটাগরীতে রাখবে ।
এর অর্থ এই দাড়ায় যে , আপনার কন্টেন্টের গুরুত্ব যত বেশী হবে গুগলের কাছে আপনার গুরুত্বও তত বেশী হবে ।
একটি নিদির্ষ্ট কিওয়ার্ড আপনার টাইটেল ও মেটা ডিস্ক্রিপশনে ব্যবহার করুন । চেষ্টা করুন আপনার বাছাইকৃত কিওয়ার্ডটি এবং তার নিকটবর্তী প্রতিযোগী কিওয়ার্ড h1 এবং h2 ট্যাগে ব্যবহার করতে । কন্টেন্টের বিভিন্ন জায়গায় আপনার কিওয়ার্ডটি ব্যবহার করুন।
আপনার সাইটটি গুগলের বোট ক্রল করছে না
গুগল আপনার সাইটটি নিয়মিত ক্রল না করলে গুগলে ডাউন পারে । গুগল ক্রল না করার কারনে আপনার সাইটের নতুন কন্টেন্ট সমুহ বা অপটিমাইজড কন্টেন্ট সমুহ গুগলে ইনডেক্স নাও হতে পারে।
শনাক্তকরণ
গুগলের স্পাইডার বা বোট যে সকল তথ্য (Data) প্রদান করে তার ভিত্তিতে গুগল র্যাংকিং করে। আপনার সাইটে গুগল বোট ক্রল না করলে সার্চ ইঞ্জিনে আপনার সাইটের আপডেট তথ্য সমুহ গুগলের কাছে পৌছায় না ফলে তা দুর্বল র্যাংকিং এর কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ গুগলের চোখে আপনার সাইট নিয়মিত আপডেট হচ্ছে না ।
সমাধান
আপনার সাইটকে গুগলে নিয়মিত ক্রল করানোর চেষ্টা করুন । লক্ষ্য করুন আপনার সাইটের ক্রলিং এর বর্তমান অবস্থা কি ?
ক. সার্ভার ফাংশন: স্লো এবং বিভিন্ন সার্ভার সমস্যার কারণে স্পাইডার সাইট ঘন ঘন ক্রল না করতে পারে। সার্ভারের সমস্যা সমাধান করুন এবং সাইটের লোডিংয়ের সময় কমান
খ. আপডেট: নিয়মিত সাইট আপডেট না হলে স্পাইডার সাইট ক্রল করা বন্ধ করে দেয়। তাই নিয়মিত আপডেট করুন সাইটকে ।
গ.অতিরিক্ত ইনবাউন্ড লিংক: গুনগত মানের প্রতি গুরুত্বদিন। সংখ্যার প্রতি নয়।
ঘ. গুগলকে ক্রলিং করতে বলুন: গুগল সার্চ কন্সোল ব্যবহার করে সাইটকে ক্রলিং করান। সার্চ কন্সোলের Fetch as Google ব্যবহার করুন ।
ঙ. সাইট ম্যাপ নিয়মিত আপডেটেড এবং ত্রুটিমুক্ত রাখুন ।
গুগল পান্ডা কর্তৃক প্যানাল্টি
গুগল পান্ডার কারণে অনেক ওয়েবসাইটে ট্রাফিকের সংথ্যা কমে গেছে। দুর্বল কন্টেন্টের কারণে গুগল যেমন খুবই ছোট আর্টিকেল, তথ্যবিহীন কিংবা নকল লেখা গুগল পান্ডার শাস্তির কারণ। এটি শুধু দুর্বল পেজগুলোকেই প্রভাবিত করবে না বরং সম্পুর্ণ সাইটকে প্রভাবিত করবে।
শনাক্তকরণ
গুগল পান্ডা আপনাকে কোন প্রকার সতর্কবার্তা ছাড়াই শাস্তি প্রদান করবে। আপনার সাইটটি যদি পান্ডা আপডেট হওয়ার পর ট্রাফিক কম যায় তবে অনেকটুকু নিশ্চিত হতে পারেন এর কারণ গুগল পান্ডা।
সমাধান
পান্ডা দুর্বল কন্টেনগুলোকে খুজে বের করে। তাই প্রথমে যা করা উচিত তা হল আপনার কন্টেন্টকে শক্তিশালী করা। দুর্বল ব্লগপোষ্ট ও অন্য ওয়েবসাইট থেকে কপিকৃত কন্টেন্ট বাদ দিন। এরপর গুগলের পান্ডার আগমনের অপেক্ষা করুন । গুগল পান্ডা অনেক ধীরগতিতে কাজ করে।
আপনার লিংক পেঙ্গুইনকে আকর্ষন করা
গুগল পান্ডা দুর্বল কন্টেন্টকে খুজে বের করে ঠিক তেমনি পেঙ্গুইন অপ্রত্যাশিত লিংক খুজে বের করে। আপনি যথন অতিমাত্রায় স্পামিং করবেন একই উৎস থেকে অনেক বেশী পরিমান লিংক পাবেন তা পেঙ্গুইনের দৃষ্টি আকর্ষন করবে এবং আপনার ওয়েবসাইটকে র্যাংকিং এ নিচে নামিয়ে দিবে।
লিংক গুরুত্বপুর্ণ। তবে প্রাসঙ্গিক এবং মান সম্পন্ন লিংক ডোমেইন অথরিটিকে প্রভাবিত করে। অতিমাত্রায় নিম্নমান সম্পন্ন লিংক আপনাকে ডাউন করে দিবে ।
শনাক্তকরণ
গুগল পান্ডার মত পেঙ্গুইনও আপনাকে কোন প্রকার সতর্কবার্তা বা ইমেইল প্রদান করবে না ।
সমাধান
স্পামি লিংকগুলো মুক্ত করুন । গুগল প্যাঙ্গুইনের পুন আগমনের জন্য অপেক্ষা করুন ।
ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা
অতিমাত্রায় পপআপ, ব্যানারের ব্যবহার, ব্যবহারকারীর জন্য বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা আপনার র্যাংকিং ডাউন করতে পারে।
শনাক্তকরুন
বাউন্স রেট বেড়ে যাবে, ট্রাফিকের পরিমান কমে যাবে ।
সমাধান
চেষ্টা করুন আপনার সাইটকে ব্যবহারকারী বান্ধব করার জন্য। অতিমাত্রায় সাইটে বিজ্ঞাপন বা পপ আপ ব্যবহার করবেন না যা ব্যবহারকারীকে বিরক্ত করতে পারে।
মোবাইল বান্ধব না হওয়া
গুগল প্রায় অর্ধেক ট্রাফিক ও ইউটিউব ভিউ মোবাইল থেকে পেয়ে থাকে । আপনার সাইট যদি মোবাইল বান্ধব না হয়ে থাকে তবে তা গুগল বান্ধব নয়।
শনাক্তকরণ
আপনার সাইট বিভিন্ন ডিভাইসে চেক করুন। অনলাইনে বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করে আপনার সাইটটি সহজেই চেক করতে পারেন।
সমাধান
সাইটটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি করার চেষ্টা করুন । আপনার সাইটটি ডেক্সটপে অনেক সুন্দর হতে পারে কিন্তু মোবাইলে ধীরগতি বা রেস্পন্সিভ না হলে সাইট র্যাংকিং এ ডাউন হতে পারে।
গুগল আপনাকে পছন্দ করে না
দুর্বল কন্টেন্ট যা ব্যবহারকারীকে আকর্ষন করে না বরং পান্ডাকে আকর্ষন করে।এই ধরনের সাইট গুগল স্টাফদের হাতে অনেক সময় ম্যানুয়ালি পেনাল্টি খায়।
এর যেসকল কারণ হতে পারে
ক. বারবার একই কন্টেন্ট
খ. সফটওয়্যারের মাধ্যেমে তৈরী কন্টেন্ট
গ. কম মানসম্পন্ন গেষ্ট পোষ্ট
শনাক্তকরন
এর জন্য তৃতীয় পক্ষীয় টুল বা সফটওয়্যারের প্রয়োজন নেই। গুগল সার্চ কন্সোল এর সহায়তাই যথেষ্ট। ম্যানুয়ালি যদি পেনাল্টি দেওয়া হয় তবে আপনি নিদিষ্ট সতর্কবার্ত দেখতে পাবেন। যেমন our site has thin content with little or no added value.
সমাধান
আপনার কন্টেন্টকে উন্নত করুন । কন্টেন্ট উন্নত হওয়ার সাথে আপনার সাইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে র্যাংকিং ফিরে পাবে ।
সর্বশেষ কিছু কথা
আপনার সাইট যদি সার্চ ফলাফলে না দেখায় তাহলে প্রথমেই কন্টেন্টের প্রতি গুরুত্বপ্রদান করুন । গুগলের নিষিদ্ধ বিষয় সমুহ আপনার সাইটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছি কিনা চেক করুন। সাইটের ডিজাইন সুন্দর ও পরিছন্ন করুন । সঠিক এসইও এর নিয়ম গুলো মেনে চলুন। আপনার ওয়েবসাইটকে দ্রুত গুগল র্যাংকিং নিয়ে আসতে পড়তে পারেন এসইও টিপস