কম্পিউটার ব্যবহার করছেন অথচ ভাইরাসের আক্রমনের শিকার হননি এটা বিরল ঘটনা। যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাহলে তো কথাই নেই। ভাইরাসের কারনে সাধারন কাজে বাধা থেকে শুরু করে কম্পিউটার পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাওয়ার সম্মুখিন হয়েছেন কমবেশি সকলেই। এমন অবস্থায় কি করবেন ?
অসুস্থ হয়ে চিকিতসার চেয়ে রোগ থেকে সাবধান থাকা উত্তম, এই নিয়মে ভাইরাস যেন আক্রমন করে ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া সবচেয়ে ভাল। যদি কম্পিউটারে এন্টিভাইরাস সফটঅয়্যার ব্যবহার করা হয় তাহলে ভাইরাস আক্রমন করতে পারে না। ভাইরাস গার্ড নামের এন্টিভাইরাসের একটি অংশ কোন ফাইল ব্যবহারের আগে যাচাই করে দেখে তাতে ভাইরাস আছে কিনা। থাকলে সেটা ব্যবহার করে না। তারপরও, এন্টিভাইরাস নতুন ভাইরাসকে চিনতে পারবে এমন নিষ্চয়তা নেই। ভাইরাস যারা তৈরী করেন তাদের মুল লক্ষই যেখানে এন্টিভাইরাসকে ফাকি দেয়া।
কাজেই, আপনি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করছেন, তারপরও ভাইরাসের আক্রমন ঘটেছে। সেক্ষেত্রে কি করবেন ?
ভাইরাস বিভিন্ন ধরনের হয়। অন্যকথায়, বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে। কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দিতে পারে, ফাইল মুছে দিতে পারে, পুরো হার্ডডিস্ক মুছে দিতে পারে (পার্টিশন), এমনকি মাদারবোর্ড নষ্ট করে দেয়ার উদাহরনও আছে। ভাইরাসের ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থাও ভিন্নতর হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে আপনি যে কাজগুলি করবেন;
. যদি এন্টিভাইরাস ইনষ্টল করা না থাকে তাহলে ইনষ্টল করুন। তার শেষ আপডেট ইনষ্টল করুন এবং কম্পিউটার স্ক্যান করুন। নতুন ভাইরাস সম্পর্কে জানার কয়েক ঘন্টার মধ্যে তারজন্য আপডেট ছাড়া হয়, কাজেই সম্ভাবনা এতে সমস্যা দুর হবে।
. কোন কোন ভাইরাস এন্টিভাইরাস ইনষ্টলে বাধা সৃষ্টি করে, কিংবা আগে ইনষ্টল করা থাকলে তাকে অকেজো করে দেয়। সেক্ষেত্রে পোর্টেবল ড্রাইভ (ফ্লাশড্রাইভ বা অন্যকিছু) থেকে বুট করে সেখান থেকে স্ক্যান করুন। এজন্য বিশেষ ধরনের এন্টিভাইরাস ভার্শন রয়েছে।
. আপনি টের পাচ্ছেন ভাইরাস আছে অথচ এন্টিভাইরাস সেটা খুজে পাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে অন্য এন্টিভাইরাস দিয়ে চেষ্টা করুন। অধিকাংশ এন্টিভাইরাস সফটঅয়্যারের ট্রায়াল ভার্শন কিছুদিন ব্যবহার করা যায় বিনামুল্যে।
. বিশেষ ভাইরাসের কারনে অনেক সময় এন্টিভাইরাস নির্মাতা ইন্টারনেটে স্ক্যান করার সুযোগ দেন। সেটা ব্যবহার করুন।
. এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা যাচ্ছে না এমন অবস্থায় অন্য কম্পিউটারের সাহায্যে স্ক্যান করুন। হার্ডডিস্ক খুলে সেখানে লাগিয়ে অথবা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্ক্যান করুন।
. যদি এর কোনটিতেই সাফল্য না পাওয়া যায় তাহলে শেষ পদক্ষেপ হচ্ছে ফরম্যাট করে নতুনভাবে অপারেটিং সিষ্টেম (এবং অন্য সবকিছু) ইনষ্টল করা। ফরম্যাট করার অর্থ হার্ডডিস্কের সমস্তকিছু মুছে যাওয়া (সাথে ভাইরাস)। কাজেই আগে সমস্ত ডাটার ব্যাকআপ করে নিন। ফরম্যাট করে অপারেটিং সিষ্টেম ইনষ্টল করুন। সাধারনত সি (C:\) ড্রাইভ ফরম্যাট করাই যথেষ্ট। অপারেটিং সিষ্টেম ইনষ্টল করার পর অন্য কোন ড্রাইভ ব্যবহার না করে শুরুতেই এন্টিভাইরাস ইনষ্টল করে নিন, সবগুলি ড্রাইভ স্ক্যান করুন, এরপর ডাটা ব্যবহার/কপি করুন।
কিছু নিয়ম মেনে আপনি ভাইরাস থেকে শতর্ক থাকতে পারেন
. পাইরেটেড সফটঅয়্যার, গেম ইত্যাদির মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে ভাইরাস ছড়ানো হয়। ব্যবহারের সময় এদিকে দৃষ্টি রাখুন। যাকিছু পেলেই ইনষ্টল করবেন না।
. ফ্লাশ ড্রাইভ (পেন ড্রাইভ) ব্যবহারে শতর্ক থাকুন। বেশকিছু ভাইরাস বিশেষভাবে ফ্লাশ ড্রাইভের মাধ্যমে ছড়ায়। অন্যের কম্পিউটারে ব্যবহারের সময় সেখানে ভাইরাস আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।
. ইন্টারনেট ববহারের সময় ফায়ারওয়াল, এন্টিস্পাইঅয়্যার ব্যবহার করুন।
. যে কোন সাইটে যাবেন না। পাইরেটেড সফটঅয়্যার সাইট, হ্যাকারদের সাইট, পর্নোগ্রাফি সাইট ইত্যাদি ভাইরাস ছড়ানোর মুল যায়গা। নিয়মিত ব্যবহার করা ওয়েবসাইটগুলি বুকমার্ক করে রাখুন এবং সেখান থেকে ব্যবহার করুন।
. ইন্টারনেটে লোভনীয় কোন বিজ্ঞাপন দেখলেই সেখানে ক্লিক করবেন না।
. যেখানে সেখানে নিজের ইমেইল এড্রেস দেবেন না।
. অপরিচিত সন্দেহজনক ইমেইল ওপেন করবেন না।
কোন এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন ?
অনেকেরই স্বাভাবিক প্রশ্ন কোন এন্টিভাইরাস সবচেয়ে ভাল। বাস্তবতা হচ্ছে কোন এন্টিভাইরাসই শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে না। যে এন্টিভাইরাসও হোক, নিয়মিত আপডেট ব্যবহার করলে মোটামুটি নিষ্চিন্ত থাকতে পারেন। এমনকি বিনামুল্যের এন্টিভাইরাস ব্যবহার করে হলেও।
এন্টিভাইরাসে ভালমন্দ হিসেব করার জন্য অনেকগুলি বিষয় বিবেচনা করা হয়। কোন কোন এন্টিভাইরাস যেভাবে সবসময় গার্ড দেয় তাতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম্পিউটারের গতি কমে যায়। যাদের বড় এবং জটিল কাজ করতে হয় (যেমন গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং বা এনিমেশন) তাদের কাছে এটা বড় সমস্যা। সেক্ষেত্রে এমন এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন যারফলে কাজ বাধাগ্রস্থ হবে না। অথবা বিশেষ কম্পিউটারকে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত রাখুন এবং ফাইল লেনদেনের সময় শতর্ক থাকুন।