বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজারে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে ইন্টারনেটে শ্রম বিনিময় ও অনলাইনে কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। স্বল্প সময়ে সহজে আয়ের সুযোগ থাকাতেই ইল্যান্স, ওডেস্ক, ফ্রিল্যান্সার নামে অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে বাংলাদেশের তরুণ ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা বাড়ছে আর তাঁরা কাজও করে যাচ্ছেন সমান দক্ষতায়।
স্বল্প সময়ে কম পারিশ্রমিকে জটিল কাজের সমাধান দিচ্ছেন ফ্রিল্যান্সাররা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলো থেকে আসছে নানা কাজ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজের অর্ডার দিয়ে দক্ষ শ্রমিক বাছাই করে স্বল্প সময়ে, কম পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নিচ্ছে।
কিন্তু একটা সময় ছিল যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বাদে কাজ করিয়ে নেওয়া সম্ভবই ছিল না। বর্তমানে অনলাইনে ক্লাউড পদ্ধতিতে খুব সহজেই বিশ্বের নানা প্রান্তের দক্ষ পেশাজীবীদের দিয়ে কম পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নিতে পারছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
অনলাইনের এ শ্রমশক্তি নিয়ে সম্প্রতি ইকোনোমিস্টে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পারিশ্রমিক ও প্রতিযোগিতাই বাড়িয়েছে জনপ্রিয়তা খুব কম সময়ের নোটিশে ২২ মিনিটের একটি ভিডিও ইংরেজি থেকে স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করে দেওয়ার অর্ডার দিয়ে একটি কাজের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল ওয়েবসাইটে। কাজের জন্য বাজেট ধরা হয়েছিল এক হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয় অনলাইন মার্কেটপ্লেসের জনপ্রিয় দুটি সাইট ইল্যান্স ডটকম ও ওডেস্ক ডটকমে।
এর বিপরীতে ইল্যান্সে ২৫ টি বিড জমা পড়েছিল। অর্থাত্, ২৫ জন ফ্রিল্যান্সার ইল্যান্সে ওই কাজটির পাবার জন্য আবেদন করেন। ১৫ টি দেশের এই ২৫ জন ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিলেন নতুন ফ্রিল্যান্সার। ঘণ্টাপ্রতি কাজের ক্ষেত্রে যে পারিশ্রমিক চাওয়া হয়েছিল দেশ ভেদে তার ভিন্নতা ছিল। এ ক্ষেত্রে কোনো ফ্রিল্যান্সার ঘণ্টাপ্রতি ১৬ ডলার আবেদন করেছিলেন আবার কেউ বা কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক চেয়েছিলেন ঘণ্টাপ্রতি ৩২ ডলার ।
কাজের অভিজ্ঞতা ও অঞ্চলভেদে এ পারিশ্রমিকের তারতম্য, দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণেই অনলাইনভিত্তিক মার্কেটপ্লেসগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বিস্তৃত হয়েছে শ্রমবাজার ২০১২ সালে অনলাইন শ্রম বাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ সাল নাগাদ অনলাইন এ শ্রম বাজার দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
২০১৮ সাল নাগাদ অনলাইন শ্রমশক্তির বাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছাবে বলেই মার্কিন বাজার গবেষকেরা ধারণা করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী ওডেস্ক ও ইল্যান্স অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে সেরা প্রতিষ্ঠানের দাবি করে ওডেস্ক ও ইল্যান্স।
২০১২ সালে তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি সাইটে পাঁচ লাখেরও বেশি কাজ পোস্ট হয়েছে। ২০১২ সাল নাগাদ ওডেস্কে ৩০ লাখ ও ইল্যান্সে ২৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার কাজ পাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। তবে ওডেস্ক ও ইল্যান্স নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী দাবি করলেও অর্থ ব্যয়ের হিসাবে ইল্যান্সের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ওডেস্ক। ওডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে শুধু ওডেস্কে সাড়ে তিন কোটি ঘণ্টা কাজ হয়েছে। ইল্যান্সের প্রধান নির্বাহী ফাবিও রোসাটি এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, উচ্চ পর্যায়ের ফ্রিল্যান্স কাজের বাজার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী ইল্যান্স, আর তাই ইবে এবং ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমন সাধারণ পর্যায়ের কাজ করার কোনো চুক্তি করা হয় না।
এর বিপরীত মত নিয়ে ওডেস্কের প্রধান নির্বাহী গ্যারি সোয়ারট বলেন, বড় আকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা সৃজনশীলভাবে মেটাতে পারে বলেই ওডেস্কের অগ্রগতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে, অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে তৃতীয় অবস্থান হিসেবে ফ্রিল্যান্সার সাইটটিকে ধরা হয়। নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের হিসেবে এ সাইটটি অবশ্য শীর্ষে।
এ সাইটটিতে ৭০ লাখ নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তবে সাইটটিতে কাজের পারিশ্রমিক কম হওয়ায় এটি পিছিয়ে পড়ছে। ওডেস্ক, ইল্যান্স, ফ্রিল্যান্সার ছাড়াও নতুন নতুন আরও বেশ কিছু সাইট দ্রুত অনলাইনে সামনে চলে আসছে। ব্যবসার কৌশল শ্রমবাজার তৈরি ও ব্যবসা কৌশলের ক্ষেত্রেও অনলাইনের এ সাইটগুলো আলাদা। প্রতিটি কাজ সম্পন্ন হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি কেটে রাখে সাইটগুলো।
পাশাপাশি কাজদাতা ও কর্মীর মধ্যে রেটিং, ফিডব্যাক পদ্ধতি যুক্ত করে কাজদাতা ও কর্মীর প্রোফাইলও সমৃদ্ধ করে। তবে পারিশ্রমিক নির্ধারণ ও পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে ওডেস্ক। দক্ষতাই কাজ পাওয়ার একমাত্র উপায় অনলাইন শ্রমবাজারে কাজ করে অনেকেই নিজের প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। এ ধরনের ফ্রিল্যান্সারদের এখন উদ্যোক্তা বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এমনকি বাংলাদেশেও গড়ে উঠেছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান।
তবে বিশ্ব শ্রমশক্তি বিবর্তনের ক্ষেত্রে অনলাইনের এ শ্রম বিনিময় কী পরিবর্তন আনছে তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান অ্যাসেঞ্চারের মতে, অনলাইন শ্রমবাজারে কর্মী দ্রুত বাড়ছে। এ বাজার এখন ক্রমশ বাড়ছে। এ বাজারে কাজ করতে গেলে সবচেয়ে বেশি দক্ষতা থাকতে হবে তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে। ২০১২ সালে ওডেস্ক ও ইল্যান্সে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছেন ওয়েব প্রোগ্রামিং ও মোবাইল অ্যাপ তৈরিতে দক্ষ কর্মীরা। তবে কাজের অন্যান্য ক্ষেত্র দ্রুত বাড়ছে।
২০০৭ সালে মূলত চারটি বিভাগে কাজ পেতেন কর্মীরা। ২০১২ সালে এসে ৩৫ টিরও বেশি বিভাগে কাজ পাচ্ছেন তাঁরা। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, অনুবাদ-ভাষান্তর, কপি তৈরি করার কাজগুলো দ্রুত বাড়ছে। পারিশ্রমিক বৈষম্য অনলাইনে দক্ষ কর্মী বাছাই করে পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে কাজ দেওয়ার সুবিধা পান কাজদাতা। কাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন হলে কাজদাতা ও কর্মী পরস্পরকে মূল্যায়নের সুবিধা পান। যা তাঁদের অভিজ্ঞতা হিসেবে প্রোফাইলে যুক্ত হয়। পরবর্তী কাজ পেতেও যা সহায়ক হয়।
তবে অনলাইন শ্রম বাজারের পারিশ্রমিক বৈষম্য নিয়ে সমালোচনাও নেহাত কম নয়। কম পারিশ্রমিকে উন্নত দেশের বায়াররা উন্নয়নশীল দেশগুলোর ফ্রিল্যান্সারদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। তবে ইল্যান্স ও ওডেস্ক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করে। তাদের মতে, কাজ শুধু একমুখী নয়। অর্থাত্ উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকেও এসব সাইটে কাজ পোস্ট করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিল্যান্সাররাও আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।
অভিজ্ঞতা পারিশ্রমিক বাড়ায় অনেকে ফ্রিল্যান্সার কম পারিশ্রমিকে কাজ শুরু করলেও এক বছরের মধ্যেই আবার তার কাজের ধরন অনুসারে পারিশ্রমিক বাড়িয়ে নিচ্ছেন। এক বছরের অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে গড়ে শতকরা ৬০ শতাংশ হারে পারিশ্রমিক বাড়িয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে যা তিন বছরে ১৯০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অনলাইন শ্রমবাজারই ভবিষ্যৎ অ্যাসেঞ্চারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজদাতাকে শুধু স্থায়ী কর্মী নিয়োগ দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়াটা ঠিক হবে না বরং হাতের নাগালে থাকা অসংখ্য দক্ষ ভারচুয়াল কর্মীকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার সুযোগের কথাও ভাবতে হবে।
**আরো পড়ুন**
ওডেস্ক(oDesk)- ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয়
বিজ্ঞাপণ তৈরি করে ডলার আয় করুন
Mohammad Baahir Uddin
Very good to know..Thanks a lot
Kibria
Helpful post…thanks for sharing with us
Rifat
Khuboi valo post, ekhon thake r noy online dhoka, apnar ei post ti pore onekei upokrito hoben. thanks a lot for your post
Rifat
I will try with this, amazing post, a have learn alot of things from your post bro, thanks a lot for your nice post
Rifat
Post ta pora onik vlo laglo vai
Mohammad
helpful post. onek informative