আজকের দিনে, লোকেরা অনেক সহজেই একটি ব্লগ বানিয়ে বিভিন্ন monetization এর মাধ্যম ব্যবহার করে ব্লগ থেকে টাকা আয় করতে পারেন। এমনিতে আজকাল লোকেদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে যে, ব্লগ থেকে ইনকাম করার জন্য আপনার দিনে রাতে কষ্ট করতে হবে। তবে, যদি আপনি নিজের ব্লগের একটি ব্র্যান্ড (brand) তৈরি করতে চাচ্ছেন বা ব্লগ থেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করার কথা ভাবছেন, তাহলে এই কথাটা সত্যি।
কিন্তু, যদি আপনার উদ্দেশ্য “কেবল টাকা ইনকাম করা” এবং কিছু সীমিত তবে লাভজনক পরিমাণের অর্থ (limited amount of money) প্রত্যেক মাসে আয় করা, তাহলে বিভিন্ন ধরণের সহজ উপায় রয়েছে। এই সহজ উপায় গুলির মধ্যে “একটি মাইক্রো নিস ব্লগ” (micro niche blog) তৈরি করে অনলাইন টাকা ইনকামের মাধ্যম সেরা।
একটি micro niche ব্লগ তৈরি করে, অনেক কম সময়ের মধ্যে “গুগল এডসেন্স” এর মাধ্যমে আমরা কমেও $১৫০ (dollar) বা তার থেকেও বেশি পরিমানের অর্থ, প্রত্যেক মাসে আয় করতে পারি। তাই, এই আর্টিকেল আমি আপনাদের, “ মাইক্রো নিশ ব্লগ কি”, “ব্লগ থেকে আয় করার জন্য মাইক্রো নিশ কেন সেরা” এবং “কিভাবে একটি মাইক্রো নিস ব্লগ তৈরি করবেন” এই ব্যাপারে সবটাই বলবো।
আমি আমার তৈরি করা মাইক্রো নিশ blog থেকে মাসে প্রায় $১৫০ থেকে $২০০ অব্দি টাকা google adsense এর মাধ্যমে আয় করছি। এবং, এই ব্লগে আমি কেবল ৪০ থেকে ৫০ ঘন্টার কাজ করেছি। কিছু ঘন্টার কাজ করে আপনি আপনার ব্লগ থেকে পুনরাবৃত্তি আয় (recurring income) করতে থাকবেন।
আপনি যেকোনো বিষয় বা নিশ নিয়ে একটি মাইক্রো নিশ blog তৈরি করতে পারবেন তাই, নিজের ভালো লাগা বিষয় বা নিশ নিয়ে লিখলে, সেটাতে আপনার রুচি ও থাকবে এবং সফলতার সুযোগ দুগুণ বেড়েযাবে।
মাইক্রো নিশ ব্লগ কি ? (What are micro niche blogs)
মাইক্রো নিশ ব্লগ আসলে, সহজে ব্লগ থেকে টাকা আয় করার এক অনেক লাভজনক মাধ্যম। এরকম নিশ ওয়েবসাইট আসলে একটি micro-topic (ছোট বিষয়) বা অধিক নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড (more specific keyword) এর ওপরে লক্ষ (target) করে বানানো হয়।
মানে, সাধারণ ব্লগ বা ওয়েবসাইটে আমরা বিভিন্ন রকমের keywords গুলি টার্গেট করে আলাদা আলাদা বিষয়ে আর্টিকেল লিখি। কিন্তু, micro niche blog এর ক্ষেত্রে যেকোনো একটি লাভজনক বিষয় বেঁচে নিয়ে, তার সাথে জড়িত অধিক নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড (more specific keyword) বা micro-topic (ছোট লক্ষ্যবস্তু বিষয়) নিয়ে সম্পূর্ণ ব্লগ তৈরি করা হয়।
এখন, এই ধরণের targeted micro niche ব্লগে, একটি নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড বা micro-topic এর সাথে জড়িত আর্টিকেল আপনার লিখতে হবে। আপনি একটি ব্লগ বানানোর কথা ভাবছেন এবং ব্লগে smartphone এর বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লিখবেন বলে ভেবেছেন।এই ক্ষেত্রে আপনার ব্লগের নিশ (niche) হবে “smartphone“.
কিন্তু, এখন যদি আপনি smartphone এর সাথে জড়িত আরো নির্দিষ্ট (specific) একটি টপিক বা long tail keyword এর ওপরে টার্গেট করে ব্লগ তৈরি করেন, তাহলে আপনার ব্লগ একটি মাইক্রো নিস ব্লগ বলে ধরা হবে।
যেমন “vivo budget smartphones“, “Samsung budget smartphones“, “Redmi note smartphones” এই ধরণের long tail keyword ও নির্দিষ্ট বিষয় গুলিকে micro niche বলা যেতে পারে।
কারণ এই ক্ষেত্রে, আপনি কেবল একটি নির্দিষ্ট (specific) মোবাইলের ওপরেই আর্টিকেল লিখে সম্পূর্ণ ব্লগ তৈরি করছেন। যেকোনো বড়ো একটি বিষয়ের সাথে জড়িত ছোট ছোট বিষয় বা লম্বা কীওয়ার্ড গুলি টার্গেট করে ব্লগ বানালেই সেই ব্লগ হবে micro niche ব্লগ।
এই ধরণের ব্লগ বা ওয়েবসাইটে অধিক পরিমানে ট্রাফিক ও ভিসিটর্স আসেনা। তবে, অনেক কম ট্রাফিক/ ভিসিটর্স আসলেও এই ধরণের ব্লগ থেকে ইনকামের পরিমান অনেক বেশি। তাহলে, micro niche ব্লগ কি, এই বেপারে হয়তো আপনার সম্পূর্ণ জ্ঞান হয়ে গেছে।
একটি মাইক্রো নিশ ব্লগ অধিক লাভজনক
আজ গুগল সার্চ ইঞ্জিনে targeted niche (লক্ষ্যবস্তু বিষয়) নিয়ে তৈরি করা website গুলি, যেগুলিতে নাকি কেবল একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লিখা হয়, সেই ওয়েবসাইট গুলি অধিক ভালো ভাবে রাংক (rank) করে।
যদি আপনি একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে সেই বিষয়ে একটি হাই কোয়ালিটি ব্লগ তৈরি করতে পারেন, তাহলে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে, অন্য অথরিটি ব্লগ গুলির তুলনায় আপনার ব্লগ অধিক ভালো ভাবে রাংক করবে। এতে, ব্লগে ট্রাফিক ও ভিসিটর্স অধিক বেশি পরিমানে আসবে।
তাছাড়া, এই ধরণের niche website তৈরি করলে, আপনার প্রত্যেক দিন ব্লগে আর্টিকেল লিখার কথা ভাবতে হবেনা। কেবল সপ্তায় একটি হাই কোয়ালিটি আর্টিকেল লিখলেই হয়ে যাবে। কেবল সপ্তাহে সপ্তাহে একটি করে আর্টিকেল লিখুন এবং Google adsense বা affiliate marketing এর মাধ্যমে টাকা আয় করতে থাকুন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, কেবল ১০ থেকে ২০ টি আর্টিকেল একবারের মতো লিখলেই, পরে আর কোনো আর্টিকেল না লিখলেও সমস্যা হবেনা।
তাছাড়া, এই ধরণের নিশ (niche) ওয়েবসাইট গুলি, নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে তৈরি করা হয় বলেই সার্চ ইঞ্জিন থেকে targeted traffic পাওয়ার সুযোগ অনেক বেশি।
নিজের ব্লগের বিষয়ের সাথে জড়িত পণ্য (product) এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে বিক্রি করিয়ে, অধিক ইনকাম করার সুযোগ আপনার কাছে থাকবে।
মনে রাখবেন, মাইক্রো নিশ ব্লগে কেবল টার্গেটেড ট্রাফিক আসে এবং টার্গেটেড ট্রাফিক থেকে ইনকাম যেকোনো মাধ্যমেই অধিক পরিমানে হবে।
তাহলে, কেন এই ধরণের নিশ ওয়েবসাইট (niche website) লাভজনক সেটা বুঝতে পারলেন তো ?
কিভাবে একটি মাইক্রো নিশ ওয়েবসাইট তৈরি করবেন ?
এই ধরণের micro niche website তৈরি করার জন্য আপনার কিছু বিশেষ বিষয়ে প্রথম থেকেই ধ্যান রাখতে হবে।
যেমন,
- Proper niche selection.
- Proper keyword research.
- Content planning.
- Domain selection.
- Backlink building strategies.
- Monetization techniques.
Proper niche selection & keyword research :
আপনি কোন বিষয় বা টপিক নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করার কথা ভাবছেন, সেটার ওপরেই আপনার ইনকাম ও ট্রাফিক নির্ভর করবে।
ব্লগের niche বেঁচে নেয়ার আগেই সেই নিশ (niche) বা কীওয়ার্ড, অনলাইন ইন্টারনেটে কতটা প্রচলিত এবং সেই বিষয় নিয়ে লোকেদের মধ্যে রুচি আছে কি না, সেটা আপনার রিসার্চ (research) করে বের করতেই হবে।
এই ধরণের topic বা keyword research এর জন্য, আপনার ব্যবহার করতে হবে কিছু সেরা keyword research tool.
এমনিতে, Google keyword planner টুল এই ক্ষেত্রে সব থেকে সেরা এবং ফ্রি টুল।
এই Tool ব্যবহার করে, আপনারা যেকোনো keyword বা বিষয়ে গুগলে কতটা সার্চ হয়, সেই বিষয়ে জেনেনিতে পারবেন।
এভাবে আপনারাও, নিজের নেয়া বিষয় বা কীওয়ার্ড এর ওপরে গুগলে মাসে কতটা সার্চ হচ্ছে, সেই বিষয়ে জেনেনিতে পারবেন এবং নিজের জন্য একটি লাভজনক বিষয় খুঁজে নিতে সক্ষম হবেন।
Content planning :
এখন নিজের ব্লগের niche বা বিষয় বেঁচে নেয়ার পর আপনার আসল এবং জরুরি কাজ হবে, কনটেন্ট প্ল্যানিং (content planning).
Content planning মানে, যেই বিষয় নিয়ে নিশ ব্লগ তৈরি করার কথা ভাবছেন, সেই বিষয়ে ১৫ থেকে ২০ আর্টিকেলের প্ল্যানিং করা, যেগুলি ভবিষ্যতে আপনি আপনার ব্লগে পোস্ট করতে হবে।
উদাহরণ হিসেবে, আমি যদি “MI mobile phone” বিষয়টি নিয়ে নিশ ব্লগ তৈরি করি, তাহলে এই কীওয়ার্ড এর সাথে জড়িত কিছু আর্টিকেলের বিষয় হতে পারে ,
- Budget MI mobile phones under 10 thousand.
- 5 new Mi smartphones with 6 GB RAM.
- Redmi mi mobile under 20 thousand.
এবং, এরকমি কিছু কীওয়ার্ড আইডিয়া বা টপিক নিয়ে আপনারা বিভিন্ন ধরণের আর্টিকেল লিখতে পারবেন।
মনে রাখবেন, আপনার ব্লগে লিখা প্রত্যেক আর্টিকেল যাতে ব্লগের মূল কীওয়ার্ড বা বিষয়ের সাথে রিলেটেড (related) থাকে।
ব্লগের মূল বিষয় বা কীওয়ার্ড এর ওপরে লক্ষ্য করে ব্লগে প্রত্যেক আর্টিকেল লিখতে হবে।
এই ব্যাপারটি যেকোনো নিশ ব্লগের ক্ষেত্রে অনেক জরুরি।
মনে রাখবেন, আর্টিকেলে যেগুলি keyword টার্গেট করবেন, সেগুলির জনপ্রিয়তা ও number of monthly searches এর ব্যাপারে, google keyword planner এর দ্বারা চেক অবশই করে নিবেন।
Domain & hosting selection :
ব্লগের নিশ বেঁচে নেয়ার পর এবং সম্পূর্ণ কনটেন্ট প্লানিং করে নেয়ার পর, এখন আপনার নিজের ব্লগের জন্য একটি domain name এবং hosting কিনে নিতে হবে।
মনে রাখবেন, আপনার বেঁচে নেয়া domain name এ যাতে, আপনার টার্গেট করা কীওয়ার্ড অবশই থাকে।
মানে, যদি আপনি “android games” বিষয়টি টার্গেট করে নিশ ব্লগ তৈরি করার কথা ভাবছেন, তাহলে, আপনার বেঁচে নেয়া domain নেমে, “android games” কীওয়ার্ডটি থাকতে হবে।
যেমন, topandroidgames.com বা androidgamesnews.info এবং এরকম আরো অনেক ধরণের ডোমেইন আপনারা রেজিস্টার করতে পারবেন।
ওয়েব হোস্টিং নিয়ে আপনার তেমন কিছু ভাবতে হবেনা। কেবল ভালো কোয়ালিটির ক্লাউড হোস্টিং (cloud hosting) কিনার কথা ভাববেন।
cloudways, Hostgator বা Digitalocean এইগুলি কোম্পানির ক্লাউড হোস্টিং সেরা।
মনে রাখবেন, ব্লগের হোস্টিং কোয়ালিটি ভালো না হলে, ব্লগ স্লো কাজ করবে।
এবং, একটি লো কোয়ালিটি স্লো ব্লগে গুগল সার্চ ইঞ্জিন থেকে ট্রাফিক ও ভিসিটর্স পাওয়াটা অনেক কঠিন।
একটি লোকাল ও লো কোয়ালিটি ওয়েব হোস্টিং কেনার ভুল কখনোই করবেননা।
SEO & Backlink building :
নিজের ব্লগে লিখা আর্টিকেল গুলিতে SEO র ব্যবহার অবশই করতে হবে। SEO (Search Engine Optimization) এর ব্যবহার করে আমরা google search algorithm গুলিকে আমাদের আর্টিকেলের বিষয়টি অনেক সহজে বুঝিয়ে দিতে পারি।
এতে, Google search engine থেকে ট্রাফিক ও ভিসিটর্স পাওয়ার সুযোগ অনেক বেশি বেড়ে যায়।
তাই, যেকোনো micro niche blog এ, যেগুলি আর্টিকেল লিখবেন, সবটাতেই ভালো করে On page SEO র সঠিক ব্যবহার থাকাটা অনেক বেশি জরুরি।
SEO র মধ্যে একটি অনেক জরুরি কাজ যেটা আপনার অবশই করতে হবে, সেটা হলো Backlink তৈরি করা।
নিজের ব্লগের জন্য ভালো ভালো এবং হাই কোয়ালিটি (high quality) backlinks তৈরি করতে পারলে, google search engine থেকে ট্রাফিক অধিক বেশি পরিমানে পাওয়ার অনেক সুযোগ বেড়ে যাবে।
তাই, ব্যাকলিংক তৈরি করার বিভিন্ন মাধ্যম যেমন, blog commenting, guest posting, social media sharing এবং directory submission, এগুলি ব্যবহার করে নিজের ব্লগের জন্য ভালো ভালো quality backlinks তৈরি করতে পারবেন।
সঠিক ভাবে সব কিছু করার পর, প্রায় ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে আপনার ব্লগে গুগল সার্চ থেকে কিছু সংখ্যায় ট্রাফিক ও ভিসিটর্স আশা শুরু হবে।
তবে, মনে রাখবেন, আপনার ব্লগে গুগল সার্চ থেকে কতটা ট্রাফিক বা ভিসিটর্স আসবে, সেটা নির্ভর করবে আপনার টার্গেট করা কীওয়ার্ড (keyword) এর জনপ্রিয়তা ও “monthly search volume” এর ওপরে।
তাই, জনপ্রিয় ও অধিক monthly search volume থাকা keywords বা বিষয় টার্গেট করেই নিশ ব্লগ তৈরি করবেন।
এখন, ব্লগে কিছু সংখ্যায় ট্রাফিক আসা শুরু হলে, আপনি Google adsense থেকে টাকা আয় করা শুরু করতে পারবেন।
গুগল এডসেন্স ব্লগ থেকে টাকা আয় করার সব থেকে সহজ ও সেরা মাধ্যম।
আপনি নিজের ব্লগের বিষয়ের সাথে জড়িত products বা services গুলি affiliate marketing এর মাধ্যমে বিক্রি করিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
যদি আপনি সঠিক কীওয়ার্ড টার্গেট করে সঠিক ভাবে একটি নিশ ওয়েবসাইট (niche website) তৈরি করতে পারেন, তাহলে সহজেই মাসে ১৫০ থেকে ২০০ ডলার ($150 to $200) অনেক সহজেই আয় করতে পারবেন।
**আরো পড়ুন**
বাংলাদেশ থেকে ফেসবুকের বছরে আয় ১২ হাজার কোটি টাকা!