আউটসোর্সিং-ক্রাউডসোর্সিং-ফ্রিল্যান্সিং এই শব্দগুলি ইদানিং এত বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে যে আপনি নিশ্চিতভাবেই ধরে নেয়া যায় আপনি শুনেছেন। অন্তত সরকার যখন বারবার বলছেন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশে মধ্যম আয়ের দেশে কিংবা ধনী দেশে পরিনত হবে, কিংবা আউটসোর্সিং হবে দেশের প্রধান আয়ের উতস।
কথাগুলো বলা হলেও স্পষ্ট করে উদাহরন দেয়া হয়নি। সম্ভবত আপনিও জানতে চাননি। অপেক্ষা করছেন যখন সেই সুযোগ আসবে তখন কাজে লাগাবেন। যদি নিজে থেকে উদ্দ্যোগি হয়ে জানতে চান তাহলে সংক্ষেপে জেনে নিন বিষয়গুলি আসলে কি। হয়ত নিজেকে সেজন্য প্রস্তুত করতে পারেন।
আউটসোর্সিং
কোন কোম্পানী বা প্রতিস্ঠান তাদের কাজ করার জন্য প্রয়োজন হিসেব করে লোক নিয়োগ দেবেন এটাই স্বাভাবিক। যেমন ধরুন কোন প্রতিস্ঠানের একটি কাষ্টমাইজ সফটঅয়্যার তৈরী করা প্রয়োজন। সেই প্রতিস্ঠান সেই কাজের উপযোগি প্রোগ্রামার খোজ করতে পারেন। কাজ অনুযায়ী একজন কিংবা বহুজন।
এই পদ্ধতির সমস্যা হচ্ছে, সবচেয়ে দক্ষ প্রোগ্রামার পাওয়া যাবে এমন কথা নেই, প্রোগ্রামারদের জন্য মাসিক বেতন দিলে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করতে হয়, নির্দিস্ট কাজ শেষে তাদের করানোর মত কাজ নাও থাকতে পারে। এককথায় লোক নিয়োগ দিলে একদিকে দক্ষতার সমস্যা অন্যদিকে খরচ বৃদ্ধি।
এর সমাধান হতে পারে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে। তারা কাজটি এমন কাউকে (ব্যক্তি বা প্রতিস্ঠান) দেবেন যারা কাজটি করে দেবে। যদি ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ হয় তাহলে সারা বিশ্বের যে কোন যায়গা থেকে দক্ষ ব্যক্তি যেমন পাওয়া যাবে তেমনি প্রতিযোগিতামুলক খরচে করা যাবে। এটাই আউটসোর্সিং। আপনার যে লোকবল নেই সেই লোকবল বাইরে থেকে ব্যবহার করা।
আপনি কিভাবে এতে অংশ নিতে পারেন ?
আপনি আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ খুজতে পারেন। যারা আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করার তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের কাজের কথা জানান। আপনি সেই কাজ করার আগ্রহ দেখাতে পারেন। অর্থাত নিজের যোগ্যতা, অভিজ্ঞা, লোকবল এবং অন্যান্য যাকিছু প্রয়োজন এগুলি থাকলে সেটা উল্লেখ করে কত খরচে, কত সময়ে কাজটি করে দিতে পারেন জানাবেন। তারা সন্তুষ্ট হলে আপনি কাজ পাবেন। সাধারনত আউটসোর্সিং এর জন্য প্রতিস্ঠঅন বা কয়েকজনের দল প্রয়োজন হয় যেখানে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি থাকেন।
ক্রাউডসোর্সিং
আউটসোর্সিং এর জন্য আপনি প্রতিস্ঠান বা দল গড়বেন, অথবা কোন দলে যোগ দেবেন। কিন্তু আপনি যদি নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান ?
সে সুযোগও রয়েছে ভালভাবেই। আউটসোর্সিং এর চেয়ে ছোট কাজের কথা ভাবুন। কোন ব্যক্তি (বা প্রতিস্ঠান) তাদের লোগো তৈরী করিয়ে নিতে চায়। তারপক্ষে নিশ্চয়ই একজন্য কাউকে চাকরী দেয়া সম্ভব না। তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে একাজে দক্ষ কাউকে খোজ করতে পারেন। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে তিনি তারকাছে কাজটি করিয়ে নেবেন।
একজন ব্যক্তির পক্ষে যোগাযোগ করে আরেকজনকে খুজে বের করার কাজটি জটিল। এখানে ভুমিকা নেয় কিছু প্রতিস্ঠান। আপনি যদি কাজ করার জন্য কাউকে খোজে তাহলে তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন, এই প্রতিস্ঠানগুলি তাদের ওয়েবসাইটে সেগুলি জমা রাখবে। আপনি যদি কাজ খুজতে চান তাহলেও সেখানে যোগাযোগ করবেন। কাজের লিষ্ট দেখে পছন্দের কাজের জন্য আবেদন করবেন। প্রতিটি কাজ যেহেতু দেয়া হচ্ছে সারা বিম্বের বিপুল পরিমান মানুষের সামনে সেহেতু এর নাম ক্রাউসসোর্সিং।
আপনি যদি ক্রাউসসোর্সিং পদ্ধতিতে কাজ করতে চান তাহলে আপনার প্রয়োজন কি করতে চান সেটা ঠিক করা (ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েবসাইট তৈরী, লেখালেখি, ফটোগ্রাফি যেকোন কিছুই হতে পারে), সেই কাজে দক্ষতা অর্জন করা, কোন ক্রাউডসোর্সিং সাইটের সদস্য হওয়া (সাধারনত এজন্য কোন ফি দিতে হয় না), এরপর নিয়মিত তাদের সাইটে কাজের লিষ্ট দেখে সেখানে আবেদন করা।
আপনার প্রয়োজন হবে ইন্টারনেট সংযোগ সহ কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেনের ব্যবস্থা।
ফ্রিল্যান্সার, ও-ডেস্ক ইত্যাদি অত্যন্ত নামকরা প্রতিস্ঠান। তাদের সাইটে সবসময়ই হাজার হাজার কাজ জমা থাকে। সত্যি বলতে কি, এমন কোন কাজ নেই যা তাদের কাছে পাওয়া যায় না।
ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে কাজের চুক্তিতে কাজ করা। আপনি যদি কারো জন্য দুপৃষ্ঠা লিখে ৫০০ টাকা নেন সেটা ফ্রিল্যান্সিং। কিংবা যদি কারো অনুষ্ঠানে ছবি উঠিয়ে সেজন্য ২০০০ টাকা নেন সেটাও ফ্রিল্যান্সিং। আপনার সাথে চুক্তি সেই বিশেষ কাজ এবং সেজন্য পারিশ্রমিক এই দুইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যদি চারিদিকে দৃষ্টি দেন দেখবেন স্থানীয়ভাবে প্রায় সব পেশাতেই ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন।
ফ্রিল্যান্সারএর মুল সুবিধে হচ্ছে তারা যেহেতু চাকরী করেন না তা দীর্ঘ্য কালীন চুক্তি করেন না সেহেতু তাদের স্বাধীনতা বেশি। অন্যদিকে অসুবিধে হচ্ছে নিজের কাজ নিজেকেই খুজে নিতে হয়, সুনাম-দুর্নাম সবই নিজের, লেনদেনের কাজ নিজেকেই করতে হয়।
ইন্টারনেট ফ্রিল্যান্সিং কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। আউটসোর্সিং কিংবা ক্রাউডসোর্সিংকে অনায়াসে ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। বস্তুত ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে এতটাই জনপ্রিয় যে বহু মানুষ চাকরী ছেড়ে ফ্রিল্যান্সার হচ্ছেন। একটি লোগো ডিজাইন করে ৩০০ ডলার কিংবা ওয়েবসাইট ডিজাইন করে ৫০০ ডলার, এরসাথে তুলনা করার মত চাকরী পাওয়া যখন কষ্টকর।
আপনি যদি এদের কোনটি ব্যবহার করতে চান, প্রস্তুতি নিন। এজন্য সবচেয়ে ভাল যায়গা ইন্টারনেট। নানারকম তথ্য দেয়ার জন্য শতশত ওয়েবসাইট রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের সদস্য হোন। দেশ ধনী হোক বা নাহোক আপনি নিজে ধনী হওয়ার সুযোগ পাবেন। আর আপনার মত অনেকেই যখন ধনী হয় তখনই দেশ ধনী হয়।
Md.Lipon islam
Visitor Rating: 5 Stars