আমরা অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করি শুধু মাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে। কিন্তু আপনি হয়তো ধারনাও করতে পারবেন না যে কত মানুষ শুধু তাদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আয় করছেন শত শত ডলার। আপনি যদি অনলাইনে আয় করতে চান তাহলে কম পরিশ্রমে বেশি আয় করার সুযোগ আছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। তাই ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং এ ক্যারিয়ার গড়তে মাধ্যম হিসাবে আপনিও বেছে নিতে পারেন ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, লিঙ্কডিন, পিন্টারেস্ট বা গুগল প্লাস।
অনেকে বলে থাকেন যে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম শুধুমাত্র মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য, কেনা বেচা করার জায়গা এটা নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি যে সকল মানুষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, তাদের কে আপনার উদ্দেশ্য সাধনের একটি সুন্দর উপায় হিসাবে দেখতে পারেন। আপনি যদি আপনার বন্ধু বা ফলোয়ারদের সাথে যথেষ্ট বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারেন তবে তারা আপনার শেয়ার করা লিংকগুলি ঘুরে দেখবে এবং আপনি যে প্রোডাক্ট তাদের কে কিনতে উৎসাহিত করবেন তা কিনতে তারা আগ্রহী হবে।
এখানে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আয় করার ছয়টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
১) সোশ্যাল মিডিয়ায় এফিলিয়েট মার্কেটিং করুন।
আপনি যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করুন না কেন, আপনি চাইলে www.clickbank.com এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। আর আপনার যদি এই সাইটে কোন প্রোডাক্ট মনের মত না পান তাহলে আমাজনএফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। আমাজন পৃথিবীর সবথেকে বড় ই- কমার্স সাইট যারা তাদের এফিলিয়েট অ্যাসোসিয়েট প্রতি বিক্রয়ের উপর নির্দিষ্ট কমিশন দিয়ে থাকে। আর আমাজন পণ্যের কোন ঘাটতি নেই। আপনি যে কোন পছন্দের প্রোডাক্ট প্রমোট করতে পারেন।
আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে কোন পণ্য ব্যবহার করেন এবং সেটা পছন্দ করে থাকেন আর যদি মনে করেন আপনার স্যোসাল মিডিয়ার অনুসারীরা এটি থেকে উপকৃত হবে, তাহলে সেই প্রোডাক্ট টি নিয়ে আপনার ব্লগে একটি দীর্ঘ রিভিউ লিখুন। উক্ত প্রোডাক্টের কি কি আপনার পছন্দ হয়েছে আর কি পছন্দ হয়নি এগুলো বিস্তারিত লিখুন। আপনি চাইলে এর সাথে ভিডিও যোগ করতে পারেন। পরবর্তীতে, টুইটারে বা ফেসবুকে সেই লিঙ্ক শেয়ার করে টুইটার থেকে আয় বা ফেসবুক থেকে আয় করতে পারেন।
এছাড়াও এটি যে আপনার এফিলিয়েট লিংক এটা প্রকাশ করতে ভুলবেন না। কারণ এর জন্য পাঠক বা দর্শক আপনার সততার প্রশংসা করবে।
২) নিজের কোন ডিজিটার প্রোডাক্ট বা যে কোন নিজস্ব পণ্য মার্কেটিং করুন।
যদি আপনার নিজস্ব কোন ব্লগ সাইট থাকে এবং কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আপনি এক্সপার্ট হয়ে থাকেন, তাহলে উক্ত বিষয়ের উপর পিডিএফ, বই, অডিও সিডি, বা ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরি করুন। এরপর আপনি উক্ত কনটেন্ট গুলো স্যোসাল মিডিয়ার শেয়ার করুন। আপনার নিজস্ব কনটেন্ট এর মাধ্যমে স্যোসাল মিডিয়া থেকে আয় করতে পারবেন।
Gumroad, Sellfy and Amazon’s KDP এর মত প্ল্যাটফর্মগুলির মাধ্যমে আপনার পিডিএফ, এমপি 3 বা ভিডিও ফাইল প্রকাশ এবং বিক্রি করতে পারবেন।
তবে জেকোন ডিজিটাল কনটেন্ট এর ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে তার কোয়ালিটি যদি ভাল হয়, ইনফমেটিভ হয় এবং ডিজাইন ভাল হয় তাহলে মানুষ এটা কিনবেই।
৩) অন্যের পণ্য এবং সেবা প্রচার করুন
স্যোসাল মিডিয়ার মাধ্যমে আয় করার আরও একটি ভাল উপায় হল অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের পন্য বা সেবা আপনার ফেসবুক গ্রুপে বা পেজে, টুইটারে বা ইন্সটাগ্রামে প্রচার করুন। এবং উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি পেমেন্ট নেয়া। তবে এখেত্রে আপনার ফেসবুক পেজে বা টুইটারে যত বেশি ফলোয়ার থাকবে ততো বেশি আয় করতে পারবেন।
তবে অনলাইন ইনকামের জন্য আপনি যদি বেশি বেশি পণ্যের অ্যাড প্রচার করতে থাকেন তাহলে মানুষ বিরক্ত হয়ে আপনার পেজ ছেড়ে চলে যেতে পারে। তাই এই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
এজন্য এটা খুব গুরুত্ব পূর্ণ যে আপার পোস্ট গুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সব পোস্টে কল টু একশন এর প্রয়োজন নাই। মানুষের উপকারি বা দরকারি পোস্টের মাঝে মাঝে অ্যাড বা আয়ফিলিয়েট লিঙ্কগুলো শেয়ার করুন।
৪) কারুশিল্প বা সৌখিন হ্যাডমেড পন্য নিয়ে কাজ করুন
আপনি যদি হস্তশিল্পে পারদর্শী হন বা কারুশিল্প এমনকি পোশাক এবং বুনন নিয়ে কাজ করেন তাহলে আপনার উৎপাদিত এই সকল পন্যের সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শন করে বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে Instagram এবং Pinterest পোস্ট করে শেয়ার করে ইন্সটাগ্রাম থেকে আয় বা পিন্টারেস্ট থেকে আয় করতে পারেন তাছাড়া ফেসবুক, টুইটার এবং Google+ এর মাধ্যমেও মানুষের কাছে প্রচার করে আয় করতে পারেন।
৫) শিক্ষণীয় বা পরামর্শ সেবা প্রচার করে আয় করুন
শিক্ষণীয় বিষয় বা পরামর্শ সেবা প্রচার করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একটি আদর্শজনক জায়গা। আপনি যদি গিটার এর শিক্ষক হন বা যে কোন বিষয়ের কন্সাল্টান্ট বা যে বিষয়ে আপনি দক্ষ, আপনি আপনার টার্গেট গ্রাহকের সাথে সংযোগ করে আপনার সেবা প্রচার করে আয় করতে পারেন।
এছাড়া আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ে অনলাইন টিউটর হিসাবে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
৬) ইউটিউব ভিডিও প্রমোট করুন আর ইউটিউব থেকে আয় করুন
একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করা সহজ কাজ না। কিন্তু আপনার যদি আগ্রহ থাকে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফলোয়ার থাকে তাহলে আপনার দক্ষতার বিষয় নিয়ে আজই YouTube Partner Program এ যোগ দিতে পারেন। নির্দিষ্ট বিষয়ে ইউটিউব চ্যানেল খুলুন এবং সেই চ্যানেল আপনার সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রমোট করুন। আপনি যদি ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত কাজ করেন এবং ভিডিও আপলোড দেন তাহলে খুব শিগ্রই ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন।
তবে সমসাময়িক সময়ে ইউটিউব তাদের নীতিমালার পরিবর্তন করেছে যার ফলে আপনাকে ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে নিয়মিত ভাল মানের ভিডিও আপলোড করতে হবে। তাহলেই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে আপনি একটা ভাল অঙ্কের আয় করতে পারবেন।
সর্বশেষ ভাবনা
তাই, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আয় করতে চাইলে এখনই পরিকল্পনা করুন এবং কৌশল নির্ধারণ করুন। আপনার আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আপনাকে সঠিক পরিকল্পনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় দিন। সারা দিন শুধু লাইক কমেন্ট আর এন্টারটেইনমেন্ট শেয়ার না করে অনলাইন আয়ের উৎস খুঁজে বের করুন। তাহলে কিছুদিন পরেই দেখবেন আপনার আসে পাশের বন্ধু বা পরিচিত জন সেই আগের জায়গায় আছে আর আপনি এই সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করে উঠে যাচ্ছেন সফলতার সিঁড়িতে।
এছাড়া অনলাইনে আয় সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে লিখে ফেলুন। পোস্টটি ভাল লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না, আর আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।