বর্তমান সময় সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ, তাই এটিই সবচেয়ে উত্তম সময় সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হয়ে আয় করার জন্য। সাধারণ মানুষের সাথে সাথে প্রায় সব ধরনের ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের উপস্থিতির কারণে সোশ্যাল মিডিয়া কর্ম সন্ধান ও সম্পাদনের জন্য একটি আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে।
মূলত ব্যবসায়ীক হিসাবে সোশ্যাল মিডিয়া আজকের দিনে একটি ইকো-সিস্টেম তৈরী করেছে যা সকলের জন্য সমানভাবেই উপকারি সাব্যস্ত হচ্ছে। একদিকে যেমন আপনার আমার মত ভিজিটরেরা বিনামূল্যেই সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলে আপন মানুষদের সাথে ভাব বিনিময়, নতুন বন্ধু তৈরী করা এবং দেশ বিদেশের বিভিন্ন খবরা খবর রাখার মত কাজগুলি করতে পারছে। ঠিক তার অপরদিকেই এত বিপুল মানুষের আনাগোনার কারণে ব্যবসায়ীরাও সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের ব্যবসায়ীক প্রচারণা চালাতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হয়ে আয়
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হয়ে কাজ করে আয়ের প্রসঙ্গে বলার পূর্বে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার কে সেটি সম্পর্কে অবশ্যই ধারণা থাকা প্রয়োজন। একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দ্বারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে অফিসে বা ঘরে বসে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যক্রম সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার, নিয়ন্ত্রণ বা ব্যবস্থাপনা করে থাকেন।
সহজভাবে বলতে হলে, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হচ্ছে একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি যিনি তার ক্লায়েন্টের হয়ে তার যাবতীয় কার্যাবলি সোশ্যাল মিডিয়াতে পরিচালনা করেন এবং তার বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হবার পূর্বশর্ত:
বর্তমান সময়ে বহু ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টটি যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডের প্রচারণার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এই কাজের জন্য যারা পেশাদার এমন কাউকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন, যিনি ইতিমধ্যেই এই ধরনের কাজে অভিজ্ঞ। পাশাপাশি কিছু কিছু কোম্পানী নতুনদেরও সুযোগ দিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন একথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
আপওয়ার্কসহ বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার ঘন্টায় ১৫ থেকে ৪০ ডলার আয় করে থাকেন। আপনি খুব কম সময়ের মধ্যেই অনেক বেশি সংখ্যক টাকা উপার্জন করতে পারেন, যদি আপনি এই প্লাটফর্মের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক লাভ অর্জনে সহযোগিতা করতে পারেন। বলাই বাহুল্য যে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের সকল কাজই এই প্লাটফর্মের মাঝেই সীমাবদ্ধ।
তবে এর জন্য অবশ্যই দক্ষ, কৌশলি এবং ব্যবসায়ীক কার্যাবলি সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। আর যদি আপনার মধ্যে এটি থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনি একজন আদর্শ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হওয়ার উপযুক্ত।
আজকের পোষ্টে তাই আমরা ধাপে ধাপে আপনি কিভাবে এ পেশায় সফলভাবে নিজেকে গড়ে তোলার মাধ্যমে নিজেকে স্বনির্ভর করে তুলবেন, সে বিষয়ে বিশদ আলোচনা করবো।
আপনার কর্মক্ষেত্র নির্বাচন করুন:
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে সফল হওয়ার জন্য প্রথম শর্তটি হলো যে, আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে আপনার কোন ধরনের ব্যবসায়ে এবং কোন সোশ্যাল মিডিয়াতে সবচেয়ে বেশি জ্ঞান রয়েছে। যারা এ পেশায় নতুন, তাদের অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন বেশ কিছু সোশ্যাল প্লাটফর্মে নিজের দক্ষতা প্রয়োগে আগ্রহী হয়ে থাকে। কিন্তু এর ফলে তার কাজটির আশানুরুপ ফল পাওয়ার পরিবর্তে পূর্ববর্তী দক্ষ ও অভিজ্ঞ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের ভিড়ে আরো বেশি জটিল ও কঠিন হয়ে ওঠে।
তাই আমার মতে, এমন একটি প্লাটফর্ম বেছে নেওয়া উচিৎ যেখানে কাজ করতে আপনি খুবই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আপনি শুধুমাত্র ওই প্লাটফর্মটির জন্যই নিজেকে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে কায়েন্টের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করুন। এর ফলে কায়েন্টের কাছে আপনার গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে। কারণ, কোন কায়েন্টই এমন কাউকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী হবেন না, যে মোটামুটি সবগুলি সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেকে পারদর্শী হিসেবে জাহির করে।
ভেবে দেখুন, অনেকেই আছেন যারা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে দাবী করে থাকেন। কিন্তু কায়েন্ট যখন তাদের নিয়োগ দেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা তাকে নিরাশ করেন। লক্ষ্য করলে দেখবেন ফেসবুকের তুলনায় ইন্টাগ্রাম, পিনাটরেস্ট এবং টুইটারে প্রতিযোগিতা করা অনেক সহজ। তাই শুধুমাত্র ফেসবুকের দিকেই ঝুঁকে না থেকে, আপনি এগুলির মধ্য থেকে যে কোন একটি প্লাটফর্মকে বেছে নিয়ে আপনার কায়েন্টকে লাভবান করতে পারেন।
নিজের দক্ষতাকে পুনরায় বিবেচনা করুন:
এটি একটি অতি অত্যাবশ্যকীয় কাজ, যদি আপনি নিজেকে ভবিষ্যতে সফল একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়টি হলো প্রতিনিয়ত এমন অনেকেই এধরনের পেশায় কাজ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, যাদের এ ধরনের কাজ সম্পর্কে কোন ধারণা বা দক্ষতাই নেই।
ব্যক্তিগতভাবে আমি বলবো আপনাদের কথনোই কোন কায়েন্টকে এমন কোন সেবার প্রস্তাব করা উচিৎ নয়, যাতে আপনার কোন অভিজ্ঞতা নেই। এধরনের কাজ করার ফলে একদিকে আপনি যেমন আপনার ক্লায়েন্টের বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবেন, অপরদিকে ক্লায়েন্টের কাছ থেকে বাজে ফিডব্যাক পাওয়ার কারণে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে আপনার যাত্রা শুরু হওয়ার পূর্বেই শেষ হয়ে যাবে।
এর পরিবর্তে আপনি আপনাদের সুপারিশ করবো যে, আপনার যতটা সম্ভব একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্মের উপর যতটা সম্ভব প্রশিক্ষণ নিন, জ্ঞান অর্জন করুন এবং তার পরেই সামনের দিকে অগ্রসর হোন।
এ ব্যাপারে একটি ভালো কৌশল হলো, নিজের একটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট তৈরী করা এবং আপনার দক্ষতা ও কৌশল প্রথমে সেখানেই প্রয়োগ করে দেখা। তাহলেই আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে, কোন কৌশলটি অধিক উপযোগী আর কোনটি কম।
একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হয়ে আয় করা যতটা সহজ, সঠিক দক্ষতা না থাকলে ঠিক ততটাই কঠিন। আপনি যদি সঠিকভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে না পারেন এবং সেইভাবে ক্লায়েন্টের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করতে না পারেন, তাহলে আপনি কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন না। হ্যাঁ, আপনি হয়তো কয়েক লক্ষ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের ভিড়ে নিজেকে মিশিয়ে ফেলতে পারবেন কিন্তু কাঙ্খিত সাফল্য আপনার থেকে সর্বদাই দুরে থাকবে।
**আরো পড়ুন**
ইন্সটাগ্রাম থেকে কিভাবে আয় করবেন
hasan al banna
great