একসময় ডিরেক্টর নামে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাল্টিমিডিয়া অথরিং সফটঅয়্যার ছিল ম্যাক্রোমিডিয়ার। মুলত টেক্সট, বিটম্যাপ ইমেজ, ভেক্টর ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদিকে ব্যবহার করে ইন্টারএকটিভ মাল্টিমিডিয়া তৈরী করা হত। গ্রোগ্রামিং এর জন্য ছিল শক্তিশালী স্ক্রিপ্টিং ব্যবস্থা। একসময় এখান থেকে ভেক্টর ভিত্তিক কাজগুলি পৃথক করে নতুন আরেকটি সফটঅয়্যার তৈরী করা হয়। নাম দেয়া হয় ফ্লাশ। এর বৈশিষ্ট, মুলত ভেক্টর ভিত্তিক এনিমেশন তৈরী যা ফাইল হিসেবে আকারে খুবই ছোট হবে, দেখার সময় বড়-ছোট করলে মানের হেরফের হবে না, ইন্টারনেটে খুব দ্রুত কাজ করবে। এজন্যই নাম ফ্লাশ।
এটা ফ্লাশের ইতিহাস। বর্তমানে ফ্লাশ ইন্টারনেটে ব্যবহার করা সবচেয়ে জনপ্রিয় টুলগুলির একটি। এর মালিকানা বর্তমানে ফটোশপ নির্মাতা এডবি হাতে। তারাও এতে যোগ করেছে তাদের নিজেদের প্রযুক্তি। এনিমেশনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ছাড়িয়ে অনেকে ব্যবহার করছেন টিভি এনিমেশনের জন্যও। ফ্লাশ ভিডিও নামের বিশেষ ধরনের ভিডিও ইন্টারনেটে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এর ফাইল আকারে ছোট, অথচ মান খুবই উন্নত। ফ্লাশে তৈরী গেম ইন্টারনেটের আরেকটি জনপ্রিয় বিষয়। আর কোকাকোলা-র মত বিশ্বের সেরা ব্রান্ডের ওয়েবসাইট যদি দেখেন, সেখানে রয়েছে ফ্লাশে তৈরী আকর্ষনীয় ওয়েবপেজ।
এরই মধ্যে অনেকগুলি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বিষয়গুলি আরেকটু গভীরে দেখা যাক।
ফ্লাশ এনিমেশনভেক্টরভিত্তিক টুডি এনিমেশনের জন্য ফ্লাশে রয়েছে এনিমেশন সফটঅয়্যারের সমস্ত সুবিধে। ওনিয়ন স্কিন ব্যবহার করে ড্রইং, ইংকিং থেকে শুরু করে সেল এনিমেশন, টুইন ব্যবহার। এতে সব ধরনের ড্রইং টুল রয়েছে, খুব সহজে ড্রইং করা যায়, ইচ্ছেমত রং ব্যবহার করা যায়, আবার প্রয়োজন হলে ইলাষ্ট্রেটর থেকে শুরু করে যে কোন ড্রইং সফটঅয়্যারে কাজ করে ফ্লাশে ব্যবহার করা যায়।ভেক্টর ছাড়াও রয়েছে বিটম্যাপ, ভিডিও এবং অডিও ব্যবহারের সুযোগ। কাজেই যদি ভিডিও, ষ্টিল ইমেজ এবং থ্রিডি এনিমেশন যোগ করতে চান তাতে কোন সমস্যা নেই। বিটম্যাপ ইমেজকে সহজেই ভেক্টরে পরিনত করে নিতে পারেন।ফ্লাশ নতুন ভার্শন সিএস-৫ এ ক্যারেকটার এনিমেশনের জন্য স্কেলেটন (বোন) ব্যবহারের সুযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া সেপ টুইন, মোশন টুইন এর মত টুল ব্যবহার করে এনিমেশনের কাজ করা যায় খুব দ্রুত।যারা এনিমেশনের কাজ করেন তারা ফ্লাশকে ব্যবহার করেন এনিমেটেড ওয়েব ব্যানার থেকে শুরু করে টিভি বিজ্ঞাপন, এনিমেটেড টাইটেল তৈরী, টিভির জন্য কার্টুন এনিমেশন সব ধরনের কাজেই।
ফ্লাশ ভিডিওইন্টারনেটের জনপ্রিয় ভিডিও ফরম্যাট। ওয়েবপেজ থেকেই সরাসরি এই ভিডিও প্লে করা যায়। সরাসরি ফ্লাশ ভিডিও তৈরীর জন্য অবশ্য ফ্লাশ নামের সফটঅয়্যার ব্যবহার করা প্রয়োজন হয় না। এজন্য এনকোডার নায়ে একটি সফটঅয়্যার রয়েছে যা যেকোন ফরম্যাটের ভিডিওকে ফ্লাশ ভিডিওতে কনভার্ট করতে পারে।এছাড়া ফ্লাশ ব্যবহার করে ভিডিওতে ইন্টারএকটিভিটি যোগ করতে পারেন। ভিডিও ভিত্তিক গেম তৈরীর জন্য এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়।
ফ্লাশ গেম তৈরীযারা কম্পিউটার গেমের সাথে পরিচিত তারা ফ্লাশ গেমের সাথেও পরিচিত। শুধু কম্পিউটারই না, বর্তমানের মোবাইল ফোন কিংবা ট্যাবলেটের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বিষয় ফ্লাশ গেম। ফ্লাশের সাথে রয়েছে একশনস্ক্রিপ্ট নামে সত্যিকারের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। আপনি যাকিছু করতে চান সবই করা সম্ভব এর মাধ্যমে।
ফ্লাশ ওয়েব পেজ তৈরীসাধারনভাবে ধরে নেয়া হয় ওয়েব পেজ তৈরীর জন্য আপনাকে কিছুটা এইচটিএমএল জানতে হবে। ফ্লাশ এই ধারনার বাইরে। আপনার বিন্দুমাত্র এইচটিএমএল জানার প্রয়োজন নেই। ফ্লাশে দৃষ্টিনন্দন হোমপেজ তৈরী করুন, এনিমেটেড স্লাইড শো যোগ করুন, ভিডিও-অডিও, টেক্সট, ইন্টারএকটিভিটি ইত্যাদি যোগ করুন। এরপর তাকে ওয়েবপেজ হিসেবে সেভ করুন।অবশ্য আপনি যদি আরো বেশি কন্ট্রোল চান, ফরম পুরন থেকে শুরু করে লেনদেনের ওয়েবসাইটে যাকিছু থাকে সেগুলিও যোগ করতে পারেন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এর স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজ অত্যন্ত শক্তিশালী। সেদিক থেকে কোন সীমাবদ্ধতা নেই।
ফ্লাশ মাল্টিমিডিয়া তৈরীআপনি ইন্টারএকটিভ মাল্টিমিডিয়া তৈরী করতে চান ? ইন্টারনেটে ব্যবহারের জন্য অথবা ডিস্কে ব্যবহারের জন্য। সবধরনের সুবিধে রয়েছে ফ্লাশে। পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মত সহজে হয়ত তৈরীর সুযোগ পাবেন না, তারচেয়ে কিচুটা বেশি দক্ষতা প্রয়োজন হবে। কিন্তু ফল হিসেবে যা পাবেন তা একমাত্র ফ্লাশেই সম্ভব।
ফ্লাশের পরিচিত কাজগুলির মধ্যে এই কাজগুলি প্রধান। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই জানেন এধরনের সুবিধে যেখানে থাকে তাকে আরো অনেক বেশি কাজে লাগানো যায়। কে জানে, হয়ত আপনার কাছে এটা হয়ে দাড়াবে মোবাইল ডিভাইসের প্রোগ্রাম তৈরীর সফটঅয়্যার, অথবা ক্যারেকটার এনিমেশনের জন্য নির্ভর করবেন এরই ওপর।