শেখানোর জন্য শিক্ষক, এই ব্যবস্থা হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত। প্লেটো শেখানোর জন্য যে প্রতিস্ঠান গড়েছিলেন তার আদলে বর্তমানের শিক্ষাপ্রতিস্ঠানগুলি তৈরী। তিনি একবেলা ছাত্রদের ক্লাশ নিতেন আরেক বেলা শহরের সাধারন মানুষের ক্লাশ নিতেন।
প্লেটো একজনই ছিলেন। তারমত নিজে থেকে অন্যকে শেখানোর দায়িত্ব কেউ নিচ্ছেন না। বরং বর্তমানকালে শিক্ষা পন্যে পরিনত হয়েছে। যার টাকা বেশি তার শেখার সুযোগ বেশি। সকলেরই টাকা অসীম না সেকারনেই প্রশ্ন আসে নিজে শেখার। এমন কোন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেখানে শেখানোর মত কেউ না থাকলেও সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা।
এজন্য অনেকগুলি পদ্ধতি প্রচলিত। নিজে শেখার উপযোগি বইপত্র থেকে শুরু করে বর্তমানে মাল্টিমিডিয়া, ইন্টারনেট সবকিছুই ব্যবহার করা সম্ভব।
এধরনের প্রচলিত পদ্ধতিগুলির তুলনামুলক সুবিধে-অসুবিধে তুলে ধরা হচ্ছে এখানে।
. বইপত্র
বইয়ের তুলনা বই। শেখার জন্য বইয়ের বিকল্প নেই। কম্পিউটার বিষয়ক কোন কাজ করার জন্য আপনাকে বইয়ের সবকিছু মুখস্ত করতে হবে এমন কথা নেই। অনেক বই এমনভাবে তৈরী যা কাজের সময় পাশে রাখবেন, যখন প্রয়োজন বই দেখে নেবেন। অন্য সব পদ্ধতি ব্যবহারের পরও রেফারেন্স নামের বইগুলি হাতে কাছে রাখা প্রয়োজন হয়।
সমস্যা হচ্ছে যারা বিশেষ কাজে নতুন তাদের। তারা সরাসরি রেফারেন্স বই থেকে সাহায্য নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন না। কোন প্রোগ্রামিং কোড উদাহরন সহ দেয়া থাকলেও তাকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করতে সমস্যা হয়। এজন্য প্রয়োজন হয় প্রাথমিক পদ্ধতি শেখার বই। এধরনের বইয়ের অভাব নেই। একেক লেখক একেক দৃষ্টিকোন থেকে, একেক ধরনের প্রয়োজনের কথা ভেবে বই লেখেন। সমস্যা হচ্ছে, একটি বা দুটি বইকে উদাহরন হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নেই। বইগুলি যেমন ভিন্নভাবে লেখা, যিনি বই ব্যবহার করবেন তার দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন। সেকারনে একাধিক বই ব্যবহার করা প্রয়োজন হয়। বেশি বই কেনা মানেই বেশি খরচ।
তারপরও বই সম্পর্কে একথা বলতেই হয়, বইতে কোন বিষয় যতটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা সম্ভব সেভাবে অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব না। কাজেউ নিজে শেখার জন্য প্রথম পছন্দ হতে পারে বই।
. শিক্ষামুলক ভিডিও
ভিডিও টিউটোরিয়াল অত্যন্ত জনপ্রিয়। লিনডা, ডিটিসি, টোটাল ট্রেণিং, ডিজিটাল টিউটর, কেলবি ইত্যাদি প্রতিস্ঠান কম্পিউটার বিষয়ক সমস্ত কিছুর ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরীর জন্য বিশ্বখ্যাত। বাংলা ভাষার বহু ভিডিও টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়।
ভিডিও টিউটোরিয়ালের ভাল দিক হচ্ছে এগুলি বোঝা খুব সহজ। কোন বিষয় সম্পর্কে ধারনা পাওয়ার জন্য দ্রুত কার্যকর। সমস্যার দিক হচ্ছে আপনি যত দ্রুত শিখবেন তত দ্রুত ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা। জটিল কোন কাজের কোন টিউটোরিয়াল একবার দেখে সমস্ত কিছু মনে রাখবেন একথা ধরে নেয়ার কোন কারন নেই। কপি প্রোটেকশনের কারনে ডিস্কভিত্তিক ভিডিওগুলি ডিস্ক থেকে ব্যবহার করতে হয়, ফলে একইসাথে ভিডিও এবং সফটঅয়্যার চালু করে দেখে দেখে কাজ করাও অসুবিধেজনক।
ভিডিও টিউটোরিয়ালকে এভাবে দেখতে পারেন, একেবারে নতুন কোন বিষয় সম্পর্কে জানার জন্য ভিডিও টিউটোরিয়াল উপযোগি। জটিল বিষয়ের ক্ষেত্রে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বক্তব্যগুলি কাগজে টুকে নিন।
. শিক্ষামুলক মাল্টিমিডিয়া
শিক্ষামুলক মাল্টিমিডিয়াকে বই এবং ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাঝামাঝি ধরে নিতে পারেন। এতে বইয়ের মত লেখা-বর্ননা এবং ছবি যেমন দেয়া থাকে (বইতে খরচ কমানোর জন্য অনেক সময় রঙিন ছবিকে সাদাকালো ছাপা হয়, মাল্টিমিডিয়ায় সে সমস্যা নেই), তেমনি বিশেষ বিষয়গুলি ভিডিও বা এনিমেশনের সাহায্যে তুলে ধরা যায়। এগুলির দামও বইয়ের তুলনায় কম।
একযুগ আগে বাংলা মাল্টিমিডিয়া টিউটোরিয়াল অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এরপর দুএকটি কোম্পানী মুলত ভিডিও টিউটোরিয়াল তৈরী করে এই ধারা টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমানে মাল্টিমিডিয়া তৈরীর আগ্রহ বাড়ছে। এই মুগুর্তে পর্যাপ্ত মাল্টিমিডিয়া না থাকলেও আশা করা যায় আগামীতে এই দিক আরো উন্নতি করবে।
. ব্লগ-ওয়েবসাইট টিউটোরিয়াল
যে কোন বিষয়ে টিউটোরিয়াল পাওয়র জন্য ইন্টারনেট নির্ভরোগ্য যায়গা। একেবারে প্রাথমিক টিউটোরিয়াল থেকে পেশাদারী যে কোন মানের টিউটোরিয়াল, পরামর্শ ইত্যাদি ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। সাধারন টিউটোরিয়ালগুলি বিনামুল্যে ব্যবহার করা যায়, কোন কোন সাইটে এডভান্স টিউটোরিয়ালগুলির জন্য সদস্য হতে হয়। এতে কিছুটা খরচ হলেও বিনিময়ে যা পাওয়া যায় তার তুলনা নেই।
অধিকাংশ বিষয়ে পিডিএফ বা অন্য ই-বুক হিসেবে টিউটোরিয়াল পেতে পারেন। কিংবা সাধারন ওয়েব পেজকে প্রিন্ট করে বা পিডিএফ হিসেবে সেভ করে পরবর্তীতে ব্যবহার করতে পারেন।
. সফটঅয়্যারের নিজস্ব হেল্প
প্রতিটি সফটঅয়্যারের হেলপ নামে নিজস্ব শেখানোর ব্যবস্থা থাকে। এগুলি তৈরী করা হয় যারা সেই সফটঅয়্যারের সমস্তকিছু ভালভাবে জানেন তাদের দিয়ে। কাজেই এখানে দেয়া তথ্য সবসময়ই নিখুত।
আগের সফটঅয়্যারগুলিতে এগুলি সফটঅয়্যারের সাথেই ইনষ্টল হত। বর্তমানে অনেকেই সে সুযোগ দেন না, এগুলি ব্যবহার করতে হয় ইন্টারনেটে তাদের সাইট থেকে। মুলত সফটঅয়্যার পাইরেসি বন্ধের জন্য।
যে সফটঅয়্যারই ব্যবহার করুন না কেন, তার নিজস্ব হেল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে খোজ নিন। সম্ভব হলে ব্যবহার করুন। অনেকের পিডিএফ আকারে হেল্প ব্যবহারের সুযোগ থাকে। সেক্ষেত্রে সেগুলি ডাউনলোড করে নিন।
প্রবাদ আছে সুশিক্ষিত ব্যক্তি মাত্রই স্বশিক্ষিত। যতক্ষন পর্যন্ত নিজে শেখার দক্ষতা অর্জণ না করা যায় ততক্ষন পর্যন্ত সত্যিকারের শিক্ষিত হওয়া যায় না। কম্পিউটার ভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে একথা আরো বেশি সত্য।
আপনার জন্য কেনটি বেশি প্রযোজ্য ?
সম্ভবত এখানে উল্লেখ করা পদ্ধতিগুলির মধ্যে একাধিক। একভাবে তথ্য না পেলে আরেক পদ্ধতি খোজ করুন। কোথাও না কোথাও সমাধান পাবেন।