আমাজন শুধু অনলাইনে কেনাকাটার করার মত একটি ওয়েবসাইটের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেনি। এটি বর্তমানে বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনকারী এবং অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস কোম্পানী হিসেবেও সফলতা অর্জণ করেছে। যার কারণে আগের চাইতে এখন আমাজন থেকে আয় করার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে বহুসংখ্যক দেশে কোম্পানীটি তাদের ওয়্যারহাউজ প্রতিষ্ঠা করেছে। আমেরিকার পাশাপাশি, ইন্ডিয়া, কানাডা, জার্মানি, স্পেনসহ বেশ কিছু দেশে তারা সফলভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
এই কোম্পানীটি যখন বড় হতে শুরু করে, তখন এটির মাধ্যমে নিজেদের পাশাপাশি যাতে অন্যান্য মানুষেরাও ইনকাম করতে পারে তার জন্য এটি বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বর্তমানে এটি এমন একটি মার্কেটপ্লেস যেখানে বহু ব্যক্তি, কোম্পানী তাদের প্রোডাক্ট বিক্রয় করছে। বই দিয়ে শুরু করলেও অনলাইনে বিক্রির জন্যে প্রোডাক্ট বাছাই করার উপায় হিসেবে সম্ভাব্য সবক’টিই ব্যবহার করে আমাজন আজ বিশাল একটি ব্র্যান্ড।
আর আমাজনের বিশাল ব্র্যান্ড ভ্যালুর কারণে অন্যান্য ওয়েবসাইটের তুলনায় বেশিরভাগ মানুষই এখান থেকে প্রোডাক্ট কিনছে। এতে একই সাথে কোম্পানী এবং বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছেন। এছাড়াও, আমাজনের রয়েছে অ্যাফিলিয়েশন প্রোগ্রাম। এর মাধ্যমে অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রয় করে দিয়ে কমিশন লাভ করে ইনকাম করে যাচ্ছে অসংখ্যা মানুষ। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নিই আমাজন থেকে কি কি উপায়ে আয় করা যায়।
আমাজন থেকে আয় করার উপায়
পণ্য বিক্রয় করে আয়:
আপনি যদি কোন পণ্য বিক্রয় করে আয় করতে চান, তাহলে আপনার জন্য রয়েছে এফবিএ প্রোগ্রাম। এফবিএ অর্থ হচ্ছে ফুলফিলড বাই আমাজন। এ প্রোগ্রামে আপনি চাইলে পণ্য আমাজনের ওয়্যারহাউজে জমা রাখতে পারেন। পণ্য বিক্রয় হলে কোম্পানী সেটি নিজ দায়িত্বে ওয়্যারহাউজ থেকে ক্রেতার নিকট পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর জন্য অবশ্য বিক্রেতাকে কিছু ফি পরিশোধ করতে হয়।
অনেকে এই ফি পরিশোধ করতে আগ্রহী নন বলে তারা পণ্য নিজেরাই ডেলিভারীর ব্যবস্থা করতে চান। কিন্তু আপনার পণ্য যদি খুব বেশি বিক্রয় হয় এমন হয়ে থাকে, তাহলে আমার মতে সেটির জন্য অবশ্যই এফবিএ একটি লাভজনক উপায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ভিত্তিক ব্র্যান্ড ওয়াল্টন তাদের পণ্য গ্লোবালি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আমাজনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
ই-বুক পাবলিশ করে আয়:
যাদের লেখালেখির অভ্যাস আছে, তারা চাইলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই মার্কেটপ্লেসকে ব্যবহার করে প্রতি মাসে ৪০, ০০০ ডলারেরও বেশি ইনকাম করতে পারেন। ভাবছেন কিভাবে? আমাজন কিন্ডল ডাইরেক্ট পাবলিশের মাধ্যমে আপনার লেখা ই-বুক আপনি আমাজনে বিক্রয় করতে পারবেন। আর এই পদ্ধতিটি অনেক বেশি জনপ্রিয়।
তবে, অবশ্যই যা ইচ্ছা তাই লিখলে হবে না। সফলভাবে ইনকাম করতে চাইলে এমন কিছু নিয়ে লিখুন যা সম্পর্কে আপনি অভিজ্ঞ। আবার প্রথম দিকে ইবুক বিক্রয় কম হলেও হতাশ হবেন না। তখন আরো বেশি বেশি লেখা অব্যাহত রাখুন।
প্রোডাক্ট ফিপিং:
এই কাজটি বেশ মজার বলে মনে হয় আমার কাছে। এর জন্য আপনাকে নিজে থেকে কোন পণ্য উৎপাদন না করেই বিক্রেতা হিসেবে বিক্রয় করতে পারবেন। কঠিন হয়ে গেলো? সহজে বুঝিয়ে দিচ্ছি, প্রোডাক্ট ফিপিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কম দামে কোন মার্কেটপ্লেস থেকে পণ্য ক্রয় করে সেটা আবার বেশি দামে অন্য মার্কেটপ্লেসে বিক্রয় করা হয়।
এই পদ্ধতিতে কাজ করে পণ্য ক্রয় করার জন্য সবচেয়ে ভালো ওয়েবসাইট হচ্ছে ইবে। কাজটি করার জন্য অবশ্যই আপনাকে বিভিন্ন পণ্য এবং সেগুলি কখন ছাড়ে বিক্রয় শুরু হয় তা সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখতে হবে।
আমাজনে চাকরি করুন:
বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাকরীদাতা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আমাজন নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। পৃথিবীজুড়ে তারা ৬ লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই ৬ লক্ষ মানুষ ওয়াশিংটনে অবস্থিত কোম্পানীর হেড কোয়ার্টারে বসে দায়িত্ব পালন করে না। কোম্পানিটিতে যারা চাকরি করছে, তাদের বড় একটি অংশ ঘরে বসেই সুনিপুনভাবে নিজেদের কাজ করে যাচ্ছে। আমাজনের একজন ফুল-টাইম চাকুরীজীবির বার্ষিক গড় ইনকাম ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি।
কিভাবে চাকরি পাবেন? ভিজিট করুন আমাজন জব আর সেখান থেকে যে পদে আপনি সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত সেটির জন্য আবেদন করে ফেলুন। বছরের প্রায় সব সময়ই এখানে ২০ থেকে ৩০টি পদের জন্য বিজ্ঞাপন থাকে। প্রয়োজন শুধু নিজের দক্ষতা অনুযায়ী সঠিক পদে আবেদন করার।
আমাজন অ্যাফিলিয়েট:
আপনার যদি কোন পণ্য রিভিউ সম্পর্কিত ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে থাকে, তাহলে এই পদ্ধতিটি আপনার জন্য। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আয় করার জন্য আপনাকে একজন অ্যাফিলিয়েটর হিসেবে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। তারপর আমাজনে থাকা কয়েক মিলিয়ন প্রোডাক্টের মধ্য থেকে পছন্দের নিশটি বেছে নিয়ে ওয়েবসাইটে সেটি নিয়ে রিভিউ লিখতে হবে। এত প্রোডাক্টের মধ্যে কোন নিশটি নিয়ে কাজ করা লাভজনক হবে, তা জানতে এখনই দেখে নিন অ্যামাজন নিশ রিসার্চ করার জন্য ৫টি কিলার টিপস!
রিভিউ এর পাশাপাশি প্রোডাক্টটি যাতে আমাজন থেকে কেনা যায় তার জন্যে বাটন এবং আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করতে হবে। আপনার ওয়েবসাইট থেকে কোন ভিজিটর যদি লিংকে ক্লিক করে আমাজনে যেয়ে কোন পণ্য কেনে, তবে আপনি ওই পণ্যের জন্য নির্ধারিত অ্যাফিলিয়েট কমিশন পেয়ে যাবেন।
মজার বিষয়টি হলো, যে ভিজিটরকে আপনি আমাজনে পাঠিয়েছেন সে ২৪ ঘন্টার মধ্যে যাই কিনবে, তার কমিশন আপনি পাবেন। সহজে বুঝিয়ে দেই, ধরুন আপনার ওয়েবসাইটে প্যান্ট এর রিভিউ পড়ে কোন ভিজিটর আমাজনে গেল। কিন্তু সে প্যান্ট এর সাথে শার্ট, গেঞ্জিও কিনলো। আপনি সেক্ষেত্রে ৩টি প্রোডাক্টেরই কমিশনই পাবেন। যদি ভিজিটর প্যান্ট না কিনে অন্য কিছুও কেনে, তবুও আপনি কমিশন পাবেন।
যারা জানেন না তাদের জন্য এটা বিশ্বাস করা আসলেই কঠিন যে, আমাজন নিজেদের যাত্রা শুরু করেছিল বই বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তৈরী ছোট একটি ওয়েবসাইট হিসেবে। কিন্তু সেখানে থেকে আজ তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনলাইন শপে পরিণত হয়েছে যার মোট সম্পত্তি ৬০২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। নিজেদের ইনকামের পাশাপাশি অন্যরাও যাতে এখান থেকে আয় করতে পারে তার জন্যেও আমাজনের অ্যাফিলিয়েশন প্রোগ্রাম নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এভাবে চলতে থাকলে সেদিন খুব বেশি দুরে নয়, যেদিন তাদের মোট সম্পদ ১ ট্রিলিয়নেরও বেশিতে দাঁড়াবে। আপনি যদি এই সম্পদ থেকে কিছু কানাকড়ি কুড়িয়ে নিতে চান, তবে উপরে বর্ণিত আমাজন থেকে আয় করার উপায়গুলো থেকে যে-কোনটি বেছে নিন।
**আরো পড়ুন**
ফেসবুক অ্যাড থেকে আয় করার ৫টি উপায়
কিভাবে ইনকাম টিউনস থেকে আয় করবেন
প্রতি দিন 100 থেকে 200 টাকা আয় করুন
hasan al banna
great
MD ASHRAFUL ISLAM
Visitor Rating: 5 Stars
MD ASHRAFUL ISLAM
Very Helpful Post
Thanks