অনলাইনে আয়ের কথা এদেশে অনেকেই জানেন। ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার, ইল্যান্স, ফাইভারের মত ওয়েবসাইটগুলোর সাথেও কম বেশি অনেকেই পরিচিত। কিন্তু আমি যদি বলি যে, আপনি এসব ওয়েবসাইটের থেকেও অনেক সহজভাবে গুগল থেকে আয় করতে পারেন, তাহলে আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?
আপনি হয় ভাববেন যে, আমি পাগল হয়ে গেছি, কারণ গুগল থেকে আয় করা ছেলের হাতের মোয়া নয়, তাইতো?
আমি কিন্তু সত্যিই ভুল কিছু বলিনি। হ্যাঁ, আপনি চাইলেই গুগল থেকে ইনকাম করে আপনার স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রুপ দিতে পারেন। গুগলের এমন অনেক সেবাই রয়েছে যা ব্যবহার করে আপনি ঘরে বসেই প্রতিমাসে একটা ভাল পরিমাণ টাকা আয় করতে পারেন।
গুগলের যে ফিচারগুলিকে কাজে লাগিয়ে ইনকাম করা সম্ভব তার বেশিরভাগই আমাদের অতি পরিচিত। আর তার চেয়ে বড় কথা হলো, গুগল থেকে বিপুল পরিমানে প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করা সম্ভব। প্যাসিভ ইনকাম কি এটা সহজভাবে বোঝানোর জন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি।
ধরে নিন, আপনি একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। এখন আপনি যদি ছুটিতেও যান, তবুও আপনার ইনকাম হতে থাকে। কারণ আপনি না থাকলেও আপনার কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। গুগলের প্যাসিভ ইনকামের ধারণাটিও প্রায় একই রকম। এখানে আপনি কাজ না করলেও আপনার কন্টেন্ট বার বার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই থাকবে আর আপনি যদি ঘুমিয়েও থাকেন তবুও আপনার ইনকাম হতে থাকবে। তাই চলুন দেরী না করে জেনে নিই গুগল থেকে আয়ের আদ্যোপান্ত।
গুগল অ্যাডসেন্স:
ইন্টারনেটে ইনকাম করার যতগুলি উপায় আছে তার মধ্যে গুগল অ্যাডসেন্স হচ্ছে সবচেয়ে ভাল একটি মাধ্যম। গোটা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ পাবলিশার এই ওয়েবটুলটিকে ব্যবহার করে প্যাসিভ ইনকাম করে যাচ্ছে। আর সবচেয়ে মজার বিষয়টি হচ্ছে এটি ব্যবহার করা এতটাই সহজ যা হয়তো এইমুহুর্তে আপনি ভাবতেও পারবেন না। অনেকেই না জানার কারণে ঠিক মতো ওয়েবসাইট ম্যানেজ করতে পারে না বলে অ্যাডসেন্স পায় না। তাই, গুগল অ্যাডসেন্স পাওয়ার উপায়গুলো জেনে নিয়ে তারপর অ্যাপ্লাই করুন।
প্রকৃতপক্ষে গুগল অ্যাডসেন্স হচ্ছে এমন একটি অ্যাডর্ভাটাইজিং প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে গুগল আপনার ব্লগ, ওয়েবাসইট, ইউটিউব ভিডিওতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে। ভিজিটর যখন উক্ত বিজ্ঞাপনগুলিতে ক্লিক করে, তখন তার বিনিময়ে আপনাকে অর্থ প্রদান করা হয়। এমনকি, ক্লিক না করলেও ইমপ্রেশন অর্থাৎ বিজ্ঞাপনের মাউজ কার্সরের আসা-যাওয়া থেকেও গুগল অর্থ প্রদান করে থাকে, যদি ইমপ্রেশন থেকে আসা ইনকাম ক্লিক থেকে আসা ইনকামের চেয়ে কম।
এই বিজ্ঞাপনগুলি আসে গুগলের অ্যাডওয়ার্ড প্রোগ্রাম থেকে যেখানে বিভিন্ন নামী দামী কোম্পানী নিজেদের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। আরেকটু পরিস্কার করি, ধরেন আলী বাবা গুগলের মাধ্যমে অ্যাড দিচ্ছে আর গুগল আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাড প্রদর্শন করছে। এক্ষেত্রে আলী বাবা হচ্ছে অ্যাডভার্টাইজার আর আপনি হচ্ছেন পাবলিশার। এখন গুগল অ্যাডভার্টাইজার থেকে প্রতি ক্লিকের বিপরীতে যে অর্থ পায়, তা থেকে পাবলিশারকে ৬৮ পার্সেন্ট দিয়ে দেয়, বাকীটা গুগল রাখে।
ইউটিউব ভিডিও ক্রিয়েটর:
হাল সময়ে আমাদের দেশসহ পুরো বিশ্বেই ইউটিউবের তুমুল জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়। মানুষ ভিজ্যুয়াল কন্টেন্টের প্রতি দিন দিন ঝুঁকে পড়ার ফলে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। এছাড়া মানসম্মত ভিডিও তৈরীর মাধ্যমে অনেক ভিডিও ক্রিয়েটরকেও রাতারাতি সেলিব্রেটি বনে যেতেও দেখা যায়।
বর্তমান সময়ে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অন্যান্য যে কোন ওয়েবসাইটের তুলনায় ইউটিউবে অনেক বেশি সময় ব্যয় করেন। আর এটাকে কাজে লাগিয়ে এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা ইউটিউব থেকে আয় করেন বছরে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম ভিডিও ক্রিয়েটরদের তাদের নিজস্ব কন্টেন্ট মনেটাইজ করার সুবিধা দিয়ে থাকে। ভিডিও চলার সময় যে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হয়, তার উপর ভিত্তি করে ক্রিয়েটরকে অর্থ প্রদান করা হয়। সেই সাথে বিজ্ঞাপনগুলোর উপর যে ক্লিক পড়ে, তা থেকেও চ্যানেল মালিককে আয় দেয়া হয়।
মূলত বিজ্ঞাপন থেকে ইনকাম জেনারেট করাটাই ইউটিউব থেকে আয় করার প্রধান উৎস। আপনি যদি একজন ভিডিও ক্রিয়েটর হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার দর্শক কিভাবে বিজ্ঞাপনগুলি দেখছে তার উপর নির্ভর করেই আপনি আয় করবেন। এখন কিভাবে দেখছে এর মানে হল বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা বা ৩০ সেকেন্ডর বেশি সময় ধরে বিজ্ঞাপন দেখা ইত্যাদি।
গুগল অ্যাড মব:
আজকের দিনে স্মার্টফোনের চাহিদা যেভাবে বেড়ে চলেছে, সেটি দেখে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এ সময়ের মানুষ অনেক বেশি স্মার্টফোন নির্ভর এবং দিন দিন সেটির পরিমাণ বেড়েই চলবে। মূলত অনেক সহজেই বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে কাজ করার সুবিধার কারণে অ্যান্ড্রয়েড চালিত স্মার্টফোনগুলি এখন মানুষের হাতে হাতে। আর এই চাহিদার কারণে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে প্রতিনিয়তই গুগল প্লে ষ্টোরে হাজারো নতুন অ্যাপ আসছে।
আপনি চাইলে মানুষের প্রয়োজনীয় বা মজার কিছু বিষয় নিয়ে প্রাথমিকভাবে অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করে সেটিকে গুগল প্লে ষ্টোরে পাবলিশ করতে পারেন। আপনার অ্যাপটি কতবার ডাউনলোড হচ্ছে তার উপর আপনার ইনকাম অনেকটা নির্ভরশীল। অ্যাপ কতবার ডাউনলোড হচ্ছে তার জন্য গুগল আপনাকে কোন টাকা দেবে না, কিন্তু আপনার অ্যাপে যদি গুগল অ্যাড মব ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তাহলে ডাউনলোডকারী অ্যাপটি ব্যবহার করার সময়ে তাকে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করানোর মাধ্যমে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
আপনি হয়তো বলতে পারেন যে, আমি তো ডেভেলপার নই, আমি কিভাবে অ্যাপ ডেভেলপ করবো! সমস্যা নেই, আপনার মাথায় যদি শুধু আইডিয়া থাকে আর আপনার পকেটে থাকে টাকা, তবে আপনি যে কোন ডেভেলপারকে দিয়ে অ্যাপ বানিয়ে নিতে পারেন। ভাল একজন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার খুঁজে নিন, তার সাথে চুক্তি চূড়ান্ত করুন, তাকে আপনার আইডিয়াটি পুরোপুরি বুঝিয়ে দিন এবং এক সময় আপনার অ্যাপটি বুঝে নিন আর গুগল প্লেতে আপলোড করে দিন।
ব্লগিং, কন্টেন্ট মার্কেটিং, ভিডিও ব্লগিং এর মত কাজগুলি অতি দ্রুত গতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ ধরনের কাজ করতে যেমন খুব বেশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই, তেমনি এটা থেকে অনেক বেশি অর্থও উপার্জন করা সম্ভব। চলতি বছর সহ আগামী কয়েক দশকের মধ্যে এ-সব কাজের চাহিদা কমে যাবার সম্ভাবনা খুবই কম। আপনার যদি স্বল্প অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে আপনি নিজের সৃজনশীলতা এবং গুগলের এসব অসাধারণ ফিচারকে কাজে লাগিয়ে এখনই ইনকাম করা শুরু করুন।
গুগল থেকে ইনকাম অন্য যে কোন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে কাজ করার চেয়ে আমার কাছে ভালো মনে হয়। আমি অনেককেই দেখেছি যারা পর্যাপ্ত পরিমাণ দক্ষ না হয়েও বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে প্রোফাইল খুলে কাজে বিড করে থাকেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ না পাওয়ার ফলে তারা হতাশ হয়ে ফ্রিল্যান্সিং করাই ছেড়ে দেয়।
তাছাড়া, যারা এ-সব ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে সফলভাবে কাজ করছেন, তারাও আয় পাচ্ছেন ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচীর মতো। অর্থাৎ, কাজ করলে আয় পাচ্ছেন আর কাজ না করলে পাচ্ছেন না। কিন্তু উপরে আমি গুগল থেকে আয় করার যে পথগুলো দেখিয়েছি, সেগুলোতে আপনি যদি কাজ না’ও করেন, তবু আপনার আয় আসতেই থাকবে। দীর্ঘদিন কাজ করা বন্ধ রাখলে হয়তো আয়ের পরিমাণটা কমে যেতে পারে, তবে কখনোই বন্ধ হবে না। এটা আইনস্টাইনের কমাউন্ড ইন্টারেস্ট থিউরির মতো।
যাইহোক, গুগল থেকে ইনকাম করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় উপায়গুলি আজকে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। এছাড়া গুগল থেকে আপনি কত টাকা ইনকাম করবেন, তার কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। আর এ কারণেই অনলাইনে কাজ করার ক্ষেত্রে ২০১৮ সালে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লাটফর্ম হচ্ছে গুগল।
**আরো পড়ুন**
ফাইল আপলোড করে আয় করুন ৩টি ওয়েবসাইট থেকে
গুগল সার্চের গুরুত্বপূর্ণ অজানা কিছু তথ্য
MD ASHRAFUL ISLAM
Thank you so much for this article. it is very helpful for me.