প্যাসিভ ইনকাম করার একাধিক উপায়।
প্যাসিভ ইনকাম শুরু করার অনেক রকম উপায় রয়েছে।
কিছু আইডিয়া সম্পর্কে আপনি আগে থেকেই জানেন, যেমন ইবুক লেখা। আমরা আপনাকে সব ইনকাম আইডিয়ার লিস্ট দিবো না, কিন্তু কত রকমের কাজ যে করা সম্ভব তা সম্পর্কে একটি ধারনা দিবো। আপনি যত সময় ব্যয় করতে চান, তার সাথে মিলিয়ে যেন একটি কাজ বেছে নিতে পারেন।
একটি সফল প্যাসিভ ইনকাম বিজনেস শুরু করতে অনেক সময় ব্যয় করা লাগে অনেক শ্রম দরকার হয়। আর শুরু করার পর, সেটা মেইনটেইন করতেও অনেক কাজ করা লাগে, সেটা দিয়ে আয় শুরু না হলেও।
প্রতিটি আইডিয়ার আলাদা আলাদা রিকোওয়ারমেন্ট আছে। কিছু অনেক সহজ প্যাসিভ ইনকামের উপায়, আর কিছু অনেক জটিল। অনেকে হয়তো টাকা বিনিয়োগ করে তাড়াতাড়ি এগিয়ে যেতে পারবে, অনেকের আবার শুধু গায়ে খেটে ব্যবহার জন্য অনেক সময় কষ্ট করতে হবে। যাই হোক, দুটি উপায়েই তাড়াতাড়ি করা সম্ভব।
আর দেরি না করে, এখন আমরা প্যাসিভ ইনকামের ১৬টি উপায় সম্পর্কে জানবো।
১। স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ
আপনার পেনশন একাউন্ট থেকে থাকলে খুবই ভালো, এটাও এক রকমের প্যাসিভ ইনকাম। যেহেতু ইদানিং এর মধ্যে ব্যবহার করবেন না, তাই হয়ত এই ব্যাপারে বেশি ভেবে দেখেননি, কিন্তু এই টাকা সুদে আসলে দিন দিন বাড়ছে। এটা সবচেয়ে সহজ প্যাসিভ ইনকাম।
রিটায়ারমেন্টের জন্য সঞ্চয় যেমন সহজ, সেভাবেই আপনি আরেক উপায়ে আয় করতে পারেন যদি আয়ের টাকা এখনই খরচ করতে ইচ্ছা না করে। সব ব্যাংকই বিনিয়োগ অ্যাকাউন্টের সুবিধা দিয়ে থাকে। কিছু স্টক কিনে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করুন।
২। বই লিখুন ১ঃ প্রথাগত উপায়
বই লেখা প্যাসিভ ইনকামের একটি প্রথাগত উপায়। আপনি বই লিখবেন, সেটি কেউ পাবলিশ করলে বিক্রির উপর ভিত্তি করে তা থেকে আপনি টাকা পাবেন। এটি শত বছরের পুরোনো একটি সিস্টেম। আপনি যদি ভালো লেখক হন, ভালো গল্প লিখতে পারেন, তবে তা দিয়েই ভালো কিছু লিখতে পারেন যেটা ছাপতে প্রকাশকরা আগ্রহী হবে।
এটি প্যাসিভ ইনকামের একটি জটিল উপায়, কিন্তু এটি দিয়ে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। ভেবে দেখুন, আপনার বই বেষ্ট সেলার হতে পারে, আপনার পোস্টার দোকানে ফিচার হতে পারে, কে জানে। সমস্যা হচ্ছে এটি অনেক সময় সাপেক্ষ একটি কাজ, আর প্রতিটি ধাপেই জটিলতা রয়েছে। টাকা আসতেও অনেক সময় লাগে।
৩। বলি লিখুন ২ঃ স্বপ্রকাশিত ইবুক
প্রথাগত প্রকাশনা থেকে স্বপ্রকাশনায় সুবিধা বেশি – এডিটর ভালো থাকে, মার্কেট সাপোর্ট বেশি থাকে – কিন্তু একটা জিনিষ মাথায় রাখতে হবে, এটি অনেক কঠিন কাজ। হয়ত আপনি ভালো একটি বই লিখেছেন, কিন্তু কোন এজেন্ট সেটি নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি (বা পাবলিশার, বা রিভিউয়ার ইত্যাদি) তাহলে আপনি বেশিদুর এগুতে পারবেন না। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে, এর একটি সমাধান রয়েছে।
অ্যামাজনের মত সার্ভিসের সাহায্যে, আপনি অনলাইনে নিজের বই পাবলিশ করতে পারবেন। এই বই যে বিক্রি হবে, এর কোন গ্যারান্টি নেই, কিন্তু এটা কোন না কোন সময় সেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সাফল্যের অনেক উদাহরণও রয়েছে, লেখক যারা স্বপ্রকাশিত বই দিয়ে সফল হয়েছেন।
বই লিখতে অনেক সময় লাগে, তাই এটি প্যাসিভ ইনকামের অনেক ভালো একটি উপায় হলেও, নিজের প্রেরণা না থাকলে বই লেখা শুরু করা উচিৎ না। তা না হলে, একটি বাজে বই লিখতে আপনি অনেক সময় নষ্ট করে ফেলবেন।
৪। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ ১ঃ লিজ
হাতে বেশি টাকা থাকলে, সেটা ফেলে না রেখে কাজে লাগাতে পারেন। যেমন রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা।
পৃথিবীর অনেক জায়গাতেই, একটি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে যে টাকা আসে, সেটা কিস্তির টাকার চেয়ে বেশি হয়। হ্যা, আরও কিছু খরচ আছে, যেমন ট্যাক্স, মেরামত, কিন্তু ঠিক মত দেখে কিনলে, ভাড়া দিয়েও কিস্তির টাকা শোধ করে একটা যায়গা কিনে নেয়া যায়। পরে এতে লাভও আসা শুরু হয়।
মেরামত দরকার, এমন যায়গা কিনে নিয়ে মেরামত নিজে করে নেয়া যেতে পারে। এতে নিজে বানানোর চেয়ে খরচ কম হয়। এরপর আপনি এটি ভাড়া দিয়ে কিছু লাভ করতে পারেন।
৫। রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ ২ঃ Airbnb
আরেকটি উপায় হচ্ছে নিজের প্রপার্টি Airbnb দিয়ে ভাড়া দেয়া। বছরের পর বছর ভাড়া দিয়ে রাখলে যত পাবেন, এই উপায়ে তার থেকে কম আয় হবে, কিন্তু কম সময়ে কম ঝামেলায় এটি করে অনেক লাভ করা যায়।
৬। বন্ধুদের উপর বিনিয়োগ করুন
সবারই এমন বন্ধু থাকে যে একটি “অসাধারণ বিজনেস আইডিয়া” নিয়ে বসে থাকে যেটা বিনিয়োগ করলেই শুরু করা যায়। ওদের উপর বিনিয়োগ করা বোকামি হবে।
তার পরিবর্তে, কোন ফ্রেন্ডের যদি ছোট ও সফল ব্যবসা থেকে থাকে, যে ব্যবসা বড় করতে বিনিয়োগ খুঁজছে, এখানে আপনি নিজের টাকা দিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, এই কাজে রিস্ক আছে। আপনি নিজের সব টাকা এই কাজে হারাতে পারেন, আবার তার সাথে বন্ধুত্বও নষ্ট হতে পারে। তাই কার উপর বিনিয়োগ করবেন তা সাবধানে নির্বাচন করতে হবে।
৭। স্টক লটের ব্যবসা
অনেক কিছু একসাথে কিনে সেটা স্টোর করে, পরে সময় মত সেল করার ব্যবসা। যেমন, কয়লা। কাঠ ইত্যাদি অনেক পরিমাণের কিনে পরে ক্রেতার চাহিদা মত বিক্রি করে মুফানা লাভ করা সম্ভব।
এটি অ্যাকটিভ ইনকাম হবে না প্যাসিভ, সেই সিধান্ত আপনার উপর ডিপেন্ড করবে। আপনি আপনার পণ্য দরজায় দরজায় গিয়ে সেল করতে পারেন, বা সেল করার জন্য সেলসম্যান রাখতে পারেন। যারা কমিশনের জন্য আপনার হয়ে সেল করবে। এই বিজনেস মডেল দাঁড়া করাতে আপনাকে ক্রিয়েটিভ হতে হবে।
৮। ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট সেল করা
আপনার নিজের শপ থাকলে সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ব্র্যান্ডের জিনিষ সেল করে উপার্জন করা। কয়েকটি মগ, টিশার্ট নিজের লোগো ও ব্যাবসার নামে ছেপে সেল করার চেষ্টা করুন। লয়াল কাস্টমার থাকলে তাদের কাছে এই পণ্য বিক্রি হবে।
৯। লোকাল স্টার্টাপ সম্পর্কে খবর রাখুন
অনেক শহরেই স্টার্টাপ কালচার শুরু হয়েছে। টেকের মানুষ সব দলে দলে ঘোরাফেরা করে। এমনই গুগলেও, ফেসবুকেও। এই সুযোগে ইনভেস্টর হিসেবে কাজ করা যায়।
সকল স্টার্টাপই মুলধনের জন্য শুরু হওয়া থেকে আটকে থাকে (লোন), ব্যাংকও দিতে চায় না, আবার বিনিয়োগকারীরাও দিতে চায়না। নিজের কাজ রিলেটেড কোন স্টার্টাপে আপনি টাকা বিনিয়োগ করে পরে ব্যবসা সফল হলে সেখান থেকে আপনার লাভ হবে। ঠিক মত করতে পারলে, জীবণে আর কিছু করতে হবে না।
কিন্তু সব ভেস্তেও যেতে পারে। বেশির ভাগ স্টার্টাপই সাকসেসফুল হয়না, তাই বিনিয়োগ রিস্কি। এটা সাইড প্রজেক্ট হিসেবে চিন্তা করে কাজ করুন। নিজের সব টাকা এই কাজে ঢেলে দিবেন না। প্যাসিভ ইনকাম খুবই ভালো। কিন্তু এটি করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করে না ফেলেন যেন।
১০। মাইক্রো লোন
স্টার্টাপের মত, ছোট ব্যবসাগুলোও ব্যাংক থেকে লোন পেতে সমস্যায় পরে। বিনিয়োগকারীরা, ছোট ব্যবসা যেমন গার্ডেনিং না রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় টাকা দিতে চাননা।
Funding Circle এর মত সার্ভিস দিয়ে, আপনি মানুষের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেন। এটি এভাবে কাজ করেঃ
- হ্যারির রেস্টুরেন্ট আপগ্রেড করার জন্য ১০ হাজার ডলার দরকার।
- হ্যারি লোনের জন্য ফান্ডিং সার্কেলে লিস্টিং করেছে।
- আপনি এখানে ২০০ ডলার ১০% সুদে লোন দিতে রাজি হতে পারেন।
- আরও অনেক মানুষের টাকা মিলে হ্যারির সব টাকা উঠে আসবে।
- লোন ফান্ড হয়ে গেল।
- হ্যারি টাকার কিস্তি ফেরত দিলে সেটা সবাই ভাগ ভাগ হয়ে ফেরত পাবে।
P2P লেন্ডিং আস্তে আস্তে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে, কারণ এটি খুব সহজেই প্যাসিভ ইনকাম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি সাইটের আলাদা আলাদা নিয়মনীতি আছে, সব বুঝে নিলে বোঝা যায় যে বছরের শেষে ৬% থেকে ১০% মুনাফা হওয়া সম্ভব।
১১। স্টক ইমেজ সেল
আপনি যদি অনেক ছবি তোলেন, তাহলে সেই ছবি স্টক ইমেজ হিসেবে সেল করতে পারেন। এমন করে সহজেই কিছু প্যাসিভ ইনকাম করা যায়। PhotoDune এর মত মার্কেটে যে কেউ ছবি সেল করতে পারে।
হ্যা, এখানে কোয়ালিটি কন্ট্রোল শক্তভাবে করা হয়, আর মডেলিং রিজিল সাইন করে নিতে হয়, কিন্তু এ ছাড়া সেল করতে আর কোন ঝামেলা সইতে হয়না। এছাড়া ছবি সেল করার সাথে সাথে ওয়েবসাইট টেমপ্লেট, গ্রাফিক্স, ভিডিও ফাইল ইত্যাদিও সেল করতে পারেন।
১২। অনলাইন ক্রাফট সেল
এটি আসলে অ্যাকটিভ না প্যাসিভ ইনিকাম তা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। Etsy এর মত অনলাইন স্টোর দিয়ে যে কেউ নিজের ক্রাফট প্রজেক্ট শুরু করতে পারে। কিছু বানাতে যেমন কয়েক ঘন্টা লাগে (আবার অনেক হাজার ঘন্টাও লাগে)। এগুলা খুবই হাতেকলমের কাজ।
তাও, কারও হ্যান্ডীক্রাফটসের হবি থাকলে, সে এই উপায় অবলম্বন করে প্যাসিভ ইনকামের পথ করে নিতে পারে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, আনন্নদের হবি যেন আপনি স্ট্রেসফুল কাজে রুপান্তর করে না ফেলেন।
১৩। অনলাইনে টিশার্ট সেল করা
এই উপায়ে প্যাসিভ ইনকাম আজকাল অনেক জনপ্রিয়। এই ব্যাপারে আমরা পরে কোন টিউটোরিয়ালে বিস্তারিত আলোচনা করব। CafePress এর মত সার্ভিসে যে কেউ ডিজাইন আপলোড করে টিশার্ট সেল করতে পারে। ট্রেন্ডি ভাইরাল কিছু ডিজাইন করতে পারলে, আপনি এই উপায়ে কিছু টাকা কামাতে পারবেন। বা, এমনও হতে পারে যে CafePress এ সারাজীবণ বসে রইলেন, একটাও সেল হল না।
এটা আসলেই একটি প্যাসিভ ইনকামের পথ। এর প্রতিটি কাজ আউটসোর্স করে দেয়া যায়, ডিজাইন থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং, মার্কেটিঙ্গও সবই অন্যদের দিয়ে করানো যায়। সব অটোমেট করে দিয়ে আপনি সহজেই এই প্যাসিব ইনকাম বিজনেস মেইনটেইন করতে পারবে।
১৪। জিনিষপত্র ভাড়ায় দেয়া
নিজের দামি জিনিষ আপনি অন্যদের ভাড়ায় দিতে পারেন। যাদের এগুলা অকেশনালি ব্যবহার করতে হবে তারা না কিনে কমে আপনার থেকে ভাড়া দিয়ে ব্যবহার করতে পারবে।
যেমন ক্যামেরার সরঞ্জামঃ ShareGrid দিয়ে ক্যামেরার সরঞ্জাম, লেন্স, ইত্যাদি আপনার নিকটবর্তী এলাকায় মানুষকে ভাড়া দিতে পারবেন। আপনি কয়েক লাখ টাকা দিয়ে ড্রোন ক্যামেরা কিনে থাকলে, এই উপায়ে সেই টাকা উসুল করে নিতে পারেন। অনেকেরই শর্ট ফিল্ম বানাতে ড্রোন দরকার হয়, কিন্তু দাম বেশি দিয়ে সবাই এই জিনিষ কিনতে পারে না। তাদের যেই দিন এটা লাগবে, সেইদিন আপনার না লাগলে, আপনি এটা কিছু টাকার বিনিময়ে তাদের ভাড়া দিয়ে দিতে পারেন।
খুব অল্প পরিশ্রমেই এই কাজ করা সম্ভব। সরঞ্জাম দেয়া ও ফেরত আনার কাজ অবশ্য আপনাকে নিজেই করতে হবে।
১৫। একটি প্রিমেড ব্লগ ক্রয় করুন
ফ্লিপা একটি নিলাম সাইট যেখানে ওয়েবসাইট, ডোমেইন ও অ্যাপ বিক্রি হয়। কিছু মানুষ ওয়েবসাইট বানিয়ে সেটা কয়দিন চালিয়ে কয়েকদিন কিছু টাকা কামায়, যেমন ধরেন মাসে ৩০০ ডলার করে। এরপর ওই সাইট তারা কয়েক হাজার ডলারে অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর তারা আরেকটি সাইট বানানোর কাজ শুরু করে।