ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমরা ঘরে বসে আয় করার মাধ্যম হিসেবে জানি। ফ্রিল্যান্সিং কাজ থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করার জন্য সঠিক কাজটি নির্বাচন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং বেশ প্রতিযোগিতা পূর্ণ পেশা। এখন মোটামুটি সব মার্কেট-প্লেসে ফ্রিল্যান্সারদের ছড়াছড়ি। কিন্তু, প্রতিযোগীতা যেমন বেশি রয়েছে, তেমনি আয়ের মাধ্যমও রয়েছে বেশি ।
অধিকাংশ সময় দেখা যায় যে, একটি জব পোস্টে শতাধিক বিড পড়েছে। আয় তো দূরের কথা, কাজ পাওয়াটাই তখন মুশকিল হয়ে যায়। কিন্তু, আপনি যদি সঠিক কাজটি নির্বাচন করতে পারেন, তাহলে আপনার এরকম ঝামেলায় পড়তে হবে না।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে একটি উন্মুক্ত পেশা। এখানে কাজ শুরু করাটা সহজ, কিন্তু কাজ পাওয়া, ভালো মতো আয় করা এতোটা সহজ না। আজকের লেখায় আলোচনা করবো ফ্রিল্যান্সিং জগতের যে ৭টি কাজ করে আপনি সবচেয়ে বেশি আয় করতে পারবেন।
সর্বাধিক আয়ের ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ
১. লিগ্যাল সার্ভিস এক্সপার্ট
রেট : ৭০ – ১২০ ডলার/ঘন্টা
লিগ্যাল সার্ভিস ফ্রীল্যান্স জগতের সর্বোচ্চ আয়ের একটি কাজ। যদিও, এর অধিকাংশ কাজ আমেরিকা এবং ইউরোপের। তাই, এসব কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সেসকল রাষ্ট্রের আইন জানা থাকা লাগবে। শুধু বাংলাদেশি আইন শিখে সে দেশে কাজ করতে পারবেন না।
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, বাংলাদেশের জন্য না হলেও এটা কেন দিলাম? চাইলে আপনি যে কোনো দেশের আইন শিখে নিতে পারেন। তবে, এটা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো আপনাদের বোঝানো যে, ফ্রিল্যান্সিং শুধুমাত্র কম্পিউটার সম্পর্কিত কাজের জন্য নয়। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য কম্পিউটার সম্পর্কিত কাজের বাইরেও আরো অনেক কাজ আছে এবং সেগুলোও আপনি বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে পাবেন। যাই হোক, আপনি যদি একজন ল’ইয়ার হয়ে থাকেন অর্থাৎ বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকে, তবে চাইলে আপনি অন্য যে কোনো দেশের আইন সম্পর্কেও সহজেই শিখে নিতে পারেন। American Law Course সহ আরো নানা নামে অনেক অনলাইন কোর্স রয়েছে যা থেকে আপনি দেশে থেকেই বিভিন্ন দেশের আইন সম্পর্কে জানতে পারবেন।
২. সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট
রেট : ৭০ ডলার/ ঘন্টা
আপনারা নিশ্চয় হ্যাকিং এর নাম শুনে থাকবেন। অনলাইনে কাজ করলে হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়াটা স্বাভাবিক। অনলাইনে বিভিন্ন রকমের হ্যাকার আছে, যেমন হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার,গ্রে হ্যাট হ্যাকার, ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার ইত্যাদি। অধিকাংশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার ডাটা বা ওয়েবসাইট হ্যাক করে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। টাকা না পেলে অনেক সময় ডাটা বা ওয়েবসাইট ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
তাই, প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান তাদের ডাটা বা ওয়েবসাইট সুরক্ষার জন্য সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট খোঁজ করে থাকে। এসব সাইবার এক্সপার্টদের কাজ ডাটা বা ওয়েবসাইট দেখাশোনা করা কিংবা কোন বাগ থাকলে খুঁজে বের করা।
কিন্তু আপনি কিভাবে সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট হবেন? চিন্তা নেই, সাইবার সিকিউরিটি শেখার জন্য অনেক ফ্রি ওয়েবসাইট আছে। এই ওয়েবসাইটগুলোর সাহায্য নিয়ে আপনি ফ্রিতেই সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারেন এবং ধীরে ধীরে এক্সপার্ট হয়ে উঠতে পারেন।
৩. সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট
রেট : ৭০ ডলার/ ঘন্টা
সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টে আয় বেশি একথা আমরা প্রায় সবাই জানি। তাই, সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টের চাহিদা এবং আয় সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট মানে হলো আপনি বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ ও গেম তৈরী করবেন। বর্তমানে কম্পিউটার এবং মোবাইলের অ্যাপ তৈরির চাহিদা বেশি। এছাড়া, গেম ডেভলপমেন্ট এরও অনেক চাহিদা আছে। বর্তমানে জনপ্রিয় ৫টি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হলো –
- জাভাস্ক্রিপ্ট
- পাইথন
- জাভা
- সুইফট
- সি প্লাস প্লাস
ডেভলপমেন্ট থেকে আয় করার জন্যে আপনি এখানকার যে কোন একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখে কাজ শুরু করতে পারেন। পরবর্তীতে অন্যান্য ল্যাংগুয়েজও শিখতে পারেন। তবে, প্রথমে আপনাকে যেকোন একটিতে এক্সপার্ট হতে হবে। একটা ভালো করে না শিখে আরেকটা শিখতে যাওয়া চরম বোকামী। আপনি যখন যে কোন একটা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে এক্সপার্ট হয়ে যাবেন, তখন আউটসোর্সিং করার ওয়েবসাইট গুলোতে সফটওয়্যার কিংবা গেম ডেভলপমেন্টের কাজ শুরু করে দিতে পারবেন।
৪. ওয়েব ডেভলপমেন্ট
রেট : ৬০ ডলার/ ঘন্টা
ওয়েব ডেভলপমেন্টের সাতজে আমরা সবাই পরিচিত। এর মাধ্যমে আপনি মূলত বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ওয়েবসাইট তৈরী করে দিবেন অথবা তাদের ওয়েবসাইটের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টের পরেই আসে ওয়েব ডেভলপমেন্ট। ওয়েব ডেভলপমেন্টের আবার ২টি ধাপ রয়েছে। প্রতিটি ধাপের জন্যই আলাদা আলাদা ল্যাঙ্গুইয়েজ জানা লাগে। যেমন –
- ফ্রন্ট এন্ড এর জন্য – HTML, CSS, JavaScript
- ব্যাক এন্ড এর জন্য – PHP, JavaScript, Node.js, MySQL
এছাড়াও এ-সব ল্যাঙ্গুয়েজের পাশাপাশি আপনার ফ্রেমওয়ার্ক জানা থাকতে হবে। আপনি যত বেশি জানবেন, মার্কেট-প্লেসে আপনার চাহিদা এবং আয়ের পরিমাণ তত বেশি হবে।
যেহেতু বর্তমানে প্রায় প্রতিটি কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে, তারা তাদের ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণ এবং আপগ্রেডের জন্য ওয়েব ডেভলপার ভাড়া করে থাকে। এই ধরণের জবের আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি হয়।
৫. এসইও স্পেশালিষ্ট
রেট : ৫০ ডলার/ ঘন্টা
ওয়েবসাইট তৈরি করার পর যদি কোন ভিজিটর না আসে, তাহলে সেই ওয়েবসাইটের কোনও মূল্য নেই। সবাই চায় যে তাদের ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমে চলে আসুক। আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমে আনতে হলে একজন এসইও স্পেশালিষ্টের প্রয়োজন হবে। এসইও ২ ধরণের হয়। যথা –
- অন পেজ এসইও
- অফ পেজ এসইও
বর্তমান এই প্রতিযোগিতার বাজারে একজন এসইও স্পেশালিষ্টের চাহিদা এবং মূল্য অনেক। আপনি যদি একজন ভাল মানের এসইও এক্সপার্ট হতে পারেন, তাহলে আয় নিয়ে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না। সুতরাং, এসইও শেখার বিভিন্ন ওয়েবসাইট আছে। সেসকল ওয়েবসাইট থেকে এসইও শিখে শিখে যদি এক্সপার্ট হয়ে যেতে পারেন, তবে আপনার মার্কেট ভ্যালু অনেক বেড়ে যাবে।
৬. রাইটার
রেট : ৪১ ডলার/ ঘন্টা
প্রযুক্তি বিপ্লবের আগে থেকেই রাইটার বা লেখকদের চাহিদা ছিলো, এখনও আছে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, আর্টিকেল লিখে মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আপনি রাইটিংয়ের জন্য বিভিন্ন বিভাগ বেছে নিতে পারেন হতে পারে। যেমন –
- কপিরাইটিং
- আর্টিকেল রাইটিং
- টেকনিক্যাল রাইটিং
- কন্টেন্ট রাইটিং
বিভাগ ভেদে আয়ের পরিমাণ ভিন্ন। মোটামুটি সব বিভাগেই কাজের চাহিদা রয়েছে। আপনি যে বিভাগেই কাজ করবেন, অবশ্যই প্রথমে সে বিভাগে দক্ষ হতে হবে। কারণ এই সেক্টরে অদক্ষ লোকের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই, দক্ষ না হলে বেশি আয় করা সম্ভব হবে না।
৭. গ্রাফিক্স ডিজাইনার
রেট : ৩৬ ডলার/ ঘন্টা
আমাদের আরেকটি বহুল পরিচিত ফ্রীল্যান্স সেক্টর হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন।
গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিভিন্ন সেকশন আছে। এরমধ্যে কিছু সেকশন আছে যেখানে আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি সেকশন হলো ইউআই।
অন্যান্য সেকশনে এখন ফ্রিল্যান্সারের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে আয়ের পরিমাণ কম। তবে, অন্যান্য অনেক কাজ থেকে এই কাজে আয় বেশি। আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইনে এক্সপার্ট হয়ে যান তবে আয়ের জন্য আপনার চিন্তা করতে হবে না।
ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত পেশা। এখানে এই পেশায় স্বাভাবিকভাবেই প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। কোনও কাজে ভাল আয় করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সে কাজে দক্ষ হতে হবে। তাই প্রথমে যে কোন একটি বিষয়ে দক্ষ হওয়ার পরই কাজ শুরু করবেন। মনে রাখবেন শুধু ফ্রিল্যান্সিংয়ে বেকারত্ব দূরীকরণের একমাত্র উপায় নয়। আপনারা ফ্রীল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যাবসা শুরু করেও সাবলম্বী হতে পারেন। আশা করি উপরের আলোচনা ফ্রিল্যান্স জগতে আপনাদের পছন্দের সেক্টর বাছাই করতে সাহায্য করবে। পোস্টের বিষয়ে আপনাদের মতামত কমেন্ট করে জানাবেন।
আরও পড়ুনঃ
ঘরে বসে আয় করার দারুণ কিছু উপায়।
কম খরচে ছোট আকারে ডেইরী ফার্ম শুরু করুন ,বেকারত্ব দূর করুন।
Rifat
খুব ভাল একটা পোস্ট
Jahid Al Azom
ধন্যবাদ। পাশে থাকবেন।
Md Nazmul Islam
Khub E Gorupto Purno Akta Post.
Md Nazmul Islam
ধন্যবাদ।অনেক কিছু শিখলাম।
Jahid Al Azom
ধন্যবাদ। পয়াশে থাকবেন
Md Nazmul Islam
চমৎকার লাগলো
Jahid Al Azom
Thank you all