জীবনটা শুধু নাক মুখ গুঁজে পড়ালেখা করে কাটিয়ে দেবার জন্য নয়। পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রমে অংশ নিলে তবেই না ছাত্রজীবন হয়ে উঠবে মনে রাখার মতো! আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন থেকেই অর্থ উপার্জনের কথা ভাবতাম, কারণ এতে ছাত্রজীবনেই স্বনির্ভরশীল হবার একটা সুযোগ পাওয়া যায়। আজ তাই ছাত্রজীবনে অর্থ উপার্জন করার দারুণ ১০টি টিপস বলবো, যেগুলোর যেকোন একটি অনুসরণ করলেও এই উপার্জনের ব্যাপারটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাবে।
১। খুঁজে নাও টিউশনি:
আমি আমার লাইফের প্রথম টাকা উপার্জন শুরু করি টিউশনি করে। আমার এখনো মনে আছে, তিন হাজার টাকার একটি টিউশনি পেয়েছিলাম ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্রকে পড়িয়ে। সেখান থেকে শুরু করি ব্যাচ পড়ানো, এবং এভাবে তা আরো বাড়তে থাকে! আজ তোমরা যেই ১০ মিনিট স্কুল দেখছো, তার প্রাথমিক খরচগুলো কিন্তু আমার টিউশনির টাকা থেকেই দেয়া হয়েছিল! তাই আজ থেকেই টিউশনি শুরু করে দিতে পারো!প্রশ্ন আসবে, “কিন্তু আমি যে টিউশনি পাই না? আমার কি হবে?” এক্ষেত্রে আমার প্রথম টিউশনির গল্প বলি। আমরা চার বন্ধু মিলে একটা লিফলেট বানিয়েছিলাম, ‘পড়াতে চাই’ লিখে। সেগুলো আমাদের এলাকার দেয়ালগুলোয় সেঁটে দিয়েছিলাম সবাই মিলে। শুনতে অবাক লাগবে, কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা সবাই নিজ নিজ টিউশনি পেয়ে গিয়েছিলাম! তুমিও একই কাজ করতে পারো, সাফল্য আসবেই!
২। ডিজাইনিং এর দক্ষতা কাজে লাগাও:
এটা আমার অনেক পছন্দের একটি কাজ। আমি আমার ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষ থেকেই ডিজাইনের কাজ শুরু করেছিলাম। কিছুদিন পর খেয়াল করে দেখি প্রচুর ডিজাইনিং এর কাজ পাওয়া যাচ্ছে। এখন তো একজন ভালো ডিজাইনারের ডিমান্ড আরো বেশি! তাই তুমি যদি ভাল ডিজাইনিং করতে পারো তবে বসে কেন? আজ থেকেই তুমি অর্থ উপার্জন শুরু করে দিতে পারো, শুধু নিজের সাম্যর্থের পরিচয় দেবার অপেক্ষা!
৩। এডিটিং স্কিলের সঠিক ব্যবহার করো:
“ভিডিও এডিটিং” এর ধারণাটি খুব বেশি পুরনো না হলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ন স্কিল। তোমরা যারা টেন মিনিট স্কুলের ভিডিওগুলো দেখো তারা খেয়াল করবে, প্রতিটি ভিডিও এডিট করা। এই এডিটিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। বর্তমান যুগে সবাই উন্নতমানের ভিডিও চায় কিন্তু ভালো ভিডিও এডিটর পায় না। তাই তোমরা যারা ভালো এডিটিং পারো তোমাদের সামনে সুবর্ণ সুযোগ অর্থোপার্জনের!
৪। লেখার হাত ঝালাই করে নাও:
লিখতে আমরা সবাই পারি। কিন্তু ক’জনই বা পারি তার লেখাটা নিউজপেপার এ ছাপাতে? তোমার লেখার হাত যদি ভালো হয়, তাহলে তোমার সামনে সুবর্ণ সুযোগ! বাংলা কিংবা ইংলিশ যে ভাষাই হোক, চলবে। প্রচুর ব্লগিং সাইট আছে, নিউজ পেপার, অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে যে সব জায়গায় প্রচুর রাইটারের প্রয়োজন এমন কি ১০ মিনিট স্কুলেও। তাই যারা লেখালেখিতে ভালো, এই গুণটি কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জনের পন্থা খুঁজে নিতে পারো!
৫। ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং:
বর্তমান প্রজন্মের কাছে সবচাইতে আলোচিত একটি শব্দ হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর অর্থ হলো স্বাধীন বা মুক্তপেশা। অন্যভাবে বলা যায়, নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করা কে ফ্রিল্যান্সিং বলে। আমার মনে হয় এ কাজটির মানে তোমরা সবাই ইতিমধ্যে জেনে গেছো।কোনো একটা বাইরের কাজ তুমি ফ্রিল্যান্সার হয়েই করে দিচ্ছো। ধরো তুমি ডিজাইনিং এ পারদর্শী, কেউ বা আবার ওয়েব ডেভেলপমেন্টে! এমন আরো অনেক কাজ করে দিতে পারছো ফ্রিল্যান্সার হয়েই। তুমি বাংলাদেশে বসে আমেরিকার যে কারো কাজ করে দিতে পারবে। এমন হাজার হাজার কাজ আছে “আপওয়ার্কে” গেলেই তুমি সে সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে!
৬। কাজ করো এজেন্সির হয়ে:
এটি এক ধরণের কোম্পানি যে কোম্পানিগুলো বড় বড় কোম্পানির জন্য ভিডিও এডিটিং করে দেয়, ডিজাইনিং করে দেয়, প্রেজেন্টেশন তৈরী করে দেয়, কর্পোরেট ইভেন্ট নামিয়ে দেয়। তুমি যদি এরকম কোনো কাজে পটু হয়ে থাকো তাহলে অনেক কোম্পানি তোমাকে খুঁজে নিবে তাদের কাজের জন্যে। এমন কি চাইলে তুমিও যোগ দিয়ে ফেলতে পারো যেকোন এজেন্সিতে!
৭। শখ যখন অর্থ উপার্জনে সহায়ক (ফটোগ্রাফি):
এটি বিশাল এক সুযোগের হাতছানি শিক্ষার্থীদের জন্য। যারা ফটোগ্রাফি পারো, ভিডিওগ্রাফি পারো তাদের হয়ত বিস্তারিত বলার দরকার নেই যে কত ধরণের সুযোগের হাতছানি তাদের সামনে!বন্ধুদের নিয়ে নিজেই একটা ফার্ম খুলে ফেলতে পারো“Wedding Photography, Corporate Photography, Event Photography” এ ধরণের অনেক সুযোগ তাদের জন্যে খোলা রয়েছে। তোমারা যারা ১০ মিনিট স্কুলের ভিডিও গুলো দেখো সেগুলোর পেছনের কলাকুশলীরাও কিন্তু ফটোগ্রাফাররাই! তাই যারা এসবে অনেক পারদর্শী তাদের জন্য বেশ ভালো একটা উপার্জনের মাধ্যম হতে পারে ফটোগ্রাফি।
৮। ছোটখাট ব্যবসা শুরুর জন্যে ছাত্রজীবন দারুণ সময়:
আমাদের নতুন যে টি-শার্ট গুলো দেখছো তার ডিজাইনটি আমাদের হলেও আমাকে এক ছেলে তার নতুন করা কোম্পানি থেকে আমাদের এই টি-শার্ট গুলো বানিয়ে দিয়েছে। এমন আরো অনেক ছোট ছোট আইডিয়ার মাধ্যমে শুরু হতে পারে তোমাদের ছোট ব্যবসার পথচলা যা কিনা হয়ে উঠতে পারে তোমার স্বপ্নের চেয়েও বড়!
৯। ডিজিটাল যুগে কোডারের জুড়ি নেই:
আইসিটির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে পুরো পৃথিবী। তুমি যদি কোডিংয়ে ভালো হও তাহলে তুমি এ্যাপস ডেভেলপমেন্ট করতে পারো, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করতে পারো, এমন কি হতে পারে তুমি কোনো একটা বড় কোম্পানির জন্য সফটওয়্যার তৈরি করে ফেলেছো! ১০ মিনিট স্কুলে আমরা ডিজাইনার খুঁজি, এনিমেটর খুঁজি এবং অনেক কোডার ও খুঁজছি যারা কিনা আমাদের জন্যে নতুন নতুন ফিচার তৈরি করতে পারবে। তাহলে আর দেরি কেন? কোডার হয়ে থাকলে কাজে লাগাও তোমার স্কিলকে!
১০। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে অভিজ্ঞ হও:
আমরা অনেকেই অনেক ধরণের ইভেন্টে যাই। আমার অনেক বন্ধুই এই ধরণের ইভেন্টে কাজ করছে। হতে পারে ফুড ফেস্টিভাল, কর্পোরেট ইভেন্ট, পহেলা বৈশাখের ইভেন্ট। এমন আরো অনেক কিছু যা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করে পরিচালনা করাই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলোর কাজ।তোমার যদি এই ব্যাপারে দক্ষতা থাকে তাহলে এমন অনেক ম্যানেজমেন্ট ফার্ম আছে যেখানে তুমি তাদের সাথে কাজ করতে পারো, কিংবা বন্ধুদের নিয়ে নিজেই একটা ফার্ম খুলে ফেলতে পারো!
তাহলে আর দেরি কেন? দ্রুত কাজে লাগাও এই টিপসগুলোকে, খুঁজে নাও কোন বিষয়ে তুমি পারদর্শী, আর ছাত্রজীবনেই শুরু করো অর্থ উপার্জন!
Happy Learning and Earning
**আরো পড়ুন**
লেখাপড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং
Jowel Das Provas
vai student life e jodi apnar dekha paitam taile kotoi na valo hoyto, apnar ei post ti sobar jonnoi khub kaje asbe
Freelancer Sabbir
This is very attractive post .Thank You very much
Rifat
Onik vlo akta post
Rifat
Post ta pora onik vlo laglo